মৌসুমের শুরুতে শৈত্যপ্রবাহ ও বৈরী আবহাওয়া থাকলেও এবার শেরপুরে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। জেলা সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৫ হাজার ২২২ হেক্টর জমিতে ৮৮ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন আলুর ফলন হয়েছে। জেলায় এ বছর অন্যান্য জাতের পাশাপাশি ডায়মন্ড, এডিসন, বারি ৪০, বারি ৪১,সানসাইন, সান্ত¡না, রশিদা, ক্যারোলা জাতের আলুর চাষ বেশী হয়েছে। কম খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ায় দিন দিন আলু চাষে ঝুঁকছেন শেরপুরের কৃষক। বাম্পার ফলন হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ বছর আলু রপ্তানি হবে মালয়েশিয়া, রাশিয়া ও শ্রীলঙ্কায়।
কৃষি বিভাগ চলতি বছরে ৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এবার তার চেয়েও বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদিত এসব আলুর বাজারমূল্য ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা হবে বলে জানায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চরের কৃষক শ্যামল মিয়া বলেন, ‘আমি এবার ১ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। ৭০ দিনের মধ্যে আলু উঠছে (পরিপক্ব) হয়েছে। পাইকাররা আমার ১ একর জমির আলু ক্ষেত আগেই কিনে নিয়েছে। খরচ বাদে এবার আমার ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। সামনের বছর আলুর আবাদ আরও বেশি করবো।’
শ্রীবরদী উপজেলার কড়িকাহনিয়ার আলু চাষি শাহিন বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুর দিকে যে আবহাওয়া ছিল তাতে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। কারণ বেশি কুয়াশা থাকলে আলুর গাছ পচে যায়। পরে আবহাওয়া ভালো হয়েছে, আলুরও ফলন ভালো হয়েছে। ২ একরের কিছু বেশি জমিতে আমার লাখ টাকা টিকছে। আর আমি আলু তুলেই পাট বপন করে দিয়েছি।’
নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনার আলু চাষি নাইম ইসলাম বলেন, ‘আমি দেড় একর জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। আমার ৫০ হাজার টাকার মতো টিকেছে। আলু তুলে আমি পাট ও ভুট্টার আবাদ করেছি। এতে আমার বাড়তি আয় হবে।’
আলু চাষে কৃষকের লাভের পাশাপাশি আলু তোলা ও বাছাইয়ে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো নারীর। একেকজন নারীশ্রমিক এ কাজে দৈনিক ২শ থেকে ২শ ৫০ টাকা মজুরি পান। সেখানে মাসব্যাপী এই কাজের আয়ে সংসারের চাকা সচল রাখতে অনেকটাই সহযোগিতা করে।
শেরপুর সদরের কুসুমহাটির গ্রামের মুনীরা বেগম, শিখা বেগম ও মনি বেগম, মিমসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, তারা আলুর মৌসুমে আলু তোলার কাজ করেন। দিনে ২শ থেকে ২শ৫০ টাকা মজুরি পান। আর ক্ষেত তুলে দিলে তাদের আলুও দেয় গৃহস্থ। আলুর মৌসুমের পর ভুট্টা তোলার কাজ করেন। এতে তাদের সংসারে বাড়তি আয়ও হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিবানী রাণী নাথ বলেন, ‘শেরপুরের মাটি সবজি আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মাটি আলু চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত, তাই চরে আলুর ফলন তুলনামূলক বেশি হয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, চলতি বছরে ৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বছরের শুরুতে শৈত্যপ্রবাহ ও আবহাওয়া খারাপ থাকলেও জেলায় আলুর বাম্পার ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।
বিএডিসির শেরপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আলু চাষে লাভ বেশি থাকায় দিন দিন এই সবজি চাষে শেরপুরের কৃষক আগ্রহ পাচ্ছেন। এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদিত নতুন ও বড় জাতের আলুর চাহিদা বিদেশে বেশি। কারণ এসব আলু দিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। আশা করছি এ বছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ২শ টন আলু রপ্তানি হবে মালয়েশিয়া, রাশিয়া ও শ্রীলঙ্কায়।