রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ফের চৌকি পেতে জামাকাপড় বিক্রি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকাণ্ডের স্থলে ইট ও বালি বিছিয়ে নিচের অংশ মার্কেটের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে, তবে ওপরে নেই কোনো ছাউনি। নেই বিদ্যুৎ কিংবা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এমন বাস্তবতায় তপ্ত রোদেই চৌকি বসিয়ে এক হাতে ছাতা ধরে, অন্য হাতে মাল বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এদিকে খোলা মার্কেটে তপ্ত রোদের নিচে অনেকেই চৌকিতে মালামাল উঠালেও অনেক চৌকি খালি পড়ে আছে। আবার অনেকে চৌকি বানাতে পাশের ফুলবাড়িয়া মার্কেটে ভিড় জমিয়েছেন। এই অবস্থায় কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও অনেকে হতাশ। এছাড়াও বঙ্গমার্কেটে সিটি কর্পোরেশনের আগের সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের দোকান বসানোর নির্দেশনা দিচ্ছেন মালিক সমিতির নেতারা। যাদের একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত দোকান ছিল, তাদের দেয়া হচ্ছে একটা চৌকি। যেটার আয়তন সাড়ে তিন ফুট বাই পাঁচ ফুট। আর যাদের এর বেশি দোকান, তাদের সেই অনুযায়ী চৌকি দেয়া হয়েছে। এরিমধ্যে অল্প বেঁচাবিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা এবং তারা আশা করছেন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বঙ্গবাজার ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী চৌকি উদ্বোধন করেন এবং ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ২ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা এবং দোকানের লোকেশন অনুযায়ী সবাইকে বসার সুযোগ করে দিয়েছেনে। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে যারা কিছু পণ্য সরাতে সক্ষম হয়েছিলেন, বেশির ভাগ তারাই দোকান নিয়ে বসেছেন। পাইকারির পণ্যের বৃহৎ এ বিপণিবিতান থেকে পণ্য সংগ্রহ করা ঢাকার এবং দেশের অন্য স্থানের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা পড়েছেন ব্যাপক ঝামেলায়। বিভিন্ন প্রান্তের এসব খুচরা বিক্রেতা দীর্ঘদিন থেকে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আস্থা ও সমঝোতার ভিত্তিতে লেনদেন করছেন। কেউ অগ্রিম দিয়েছেন, কেউবা বাকিতে কিনে পরে অর্থ শোধ করতেন। সব কিছু পুড়ে যাওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীদের মতো অন্যরাও ঈদের আগে এ আগুন তাদের জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছে। বঙ্গবাজারে যাঁদের যাওয়া-আসা ছিল তাঁরা জানেন, সেখানকার ব্যবসা, বেচাকেনা সব সময়ই ভালো হতো। পাইকারি ও খুচরা, একই সঙ্গে চলতো সেখানে। ঢাকার বাইরে থেকে গাঁট ভরে মাল কিনে নিয়ে যেত ব্যবসায়ীরা। বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীদের এ দুর্দশায় আমাদের ক্রিকেট ও বিনোদনজগতের কিছু তারকা তাঁদের জন্য সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। সহায়তার পরিমাণ নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে প্রচুর বিবাদণ্ডবিসংবাদও ঘটেছে। দেশের বড় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিছু পোড়া কাপড় কিনে নিয়েছেন, সেগুলোকেই তারকাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করল সেই টাকা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেবে বলে। হিজড়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নগদ ২০ লাখ টাকা দেওয়া হলো। এর বাইরেও কিছু সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে কিছু অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের কাছ থেকেও কিছু এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আমাদের সকলের উচিত তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো ও সাহায্য সহযোগিতা করা। তাই আসুন, বঙ্গবাজার থেকে আমরা ঈদের কিছু কেনাকাটা করি।