সারাদেশে দাবদাহ চলছে। এরইমধ্যে ৫৮ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে রাজধানীতে। গত রোববার রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৯৬৫ সালে ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি। শুধু ঢাকা নয়, তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস করছে দেশবাসী। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুই সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী বইছে তাপপ্রবাহ। প্রতিদিনই একের পর এক রেকর্ড গড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি জেলার তাপমাত্রা। একদিকে তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অন্যদিকে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুল। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে না করেছে প্রশাসন। রোদের তাপে গলছে সড়কের পিচ। গত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমরা বলতে চাই, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনিভাবে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাথযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। জানা যাচ্ছে, তীব্র গরমে সর্দি-কাশি, জ্বরের সঙ্গে মানুষ ভুগছে পানিবাহিত রোগে। এল নিনোর প্রভাবে বাংলাদেশে এবার খরতাপের দাপট বেড়েছে। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণ মরুভূমির সব সূচক যেন ভর করেছে রাজধানীতে- যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী বা দক্ষিণাঞ্চলের যশোর-চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রাও যেন মরুভূমির তাপমাত্রাকে ছাড়িয়েছে। টানা ১৪ দিন ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে আসছে চুয়াডাঙ্গায়। দুঃসহ গরমে মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরও বেহাল দশা। ফলে এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণের সচেতনতা ও করণীয়সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা জরুরি। অন্যদিকে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখের খবর আসছে, সেগুলো আমলে নিয়ে চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। আমলে নেওয়া দরকার, তীব্র দাবদাহের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন ধান কাঁটার শ্রমিক ও কৃষক। তীব্র গরমে পুড়ছে ফসলের মাঠ। ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শত শত হেক্টর জমির ফসল পুড়ে গেছে। এ ছাড়া খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ঘর থেকে বের হলেই গায়ে জ্বালা ধরাচ্ছে তাপমাত্রা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহনীয় দাবদাহে গরম বাড়তে থাকে। সূর্যের প্রখর তাপে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক এ পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। জানা যাচ্ছে, বর্তমানে দেশে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এতে একদিকে তাপমাত্রা বাড়ছে, অন্যদিকে আর্দ্রতার কারণে গায়ে জ্বালা ধরাচ্ছে। এ ছাড়া তাপপ্রবাহ নিয়ে কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের জন্য সতর্কতা দিয়েছে। ফলে সেগুলো যেন কৃষকরা আমলে নেন এবং সচেতন হন, সেটিও লক্ষ্য করা জরুরি। বুয়েটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অপরিকল্পিতভাবে উঁচু ভবন নির্মাণ ও ভবনের মধ্যে উন্মুক্ত স্থান না রাখাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে এই বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের উদ্যোগ নেবে এমনটি কাম্য।