আবারও বাড়লো সারের দাম। সব ধরনের সারের দাম ৫ টাকা বেড়েছে। এখন থেকে কৃষক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহ্নিত ইউরিয়া সার প্রতি কেজি কিনতে হবে ২৭ টাকা দিয়ে। যদিও গত আগস্টে এ সারের দাম ছ’ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। গত ১০ আগস্ট থেকে কার্যকর নতুন দর ডিত্রপি সার প্রতি কেজি ২১ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ও এমওপি ২০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, বিশ্ব বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সার আমদানি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকার অনেক চেষ্টা করছে সারের দাম না বাড়াতে। তবে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ও বিদ্যুৎ ভর্তুকির বিবেচনায় সরকার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। অবশ্য তিনি এ কথাও বলেন যে তার সরকার ক্ষমতায় এসে সব ধরনের সারের দাম কমিয়েছিল। একসময় ডিত্রপি সারের দাম ছিল কেজি প্রতি ৯০ টাকা, সেটা কমিয়ে ১৬ টাকায় করা হয়েছিল। এখন করা হয়েছে ২১ টাকা। অন্যান্য সারের দামও কমানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্বাভাবিক হলেই তখন দাম সমন্বয় করা হবে। করোনা মহামারি ক্রান্তিকাল আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। কখন কোন নিত্যপণ্য বা কৃষিপণ্যের দাম বাড়ছে আর কমছে তা কারো জানা নাই। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা হচ্ছে, পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও দাম কিন্তু কমে না। কষ্ট হলেও ভোক্তাদের তা বহন করতে হয়। ফলে সারের বাড়তি দাম কৃষকদের কষ্ট দেবে। কৃষি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, বাড়তি দামে কৃষকদের সার কিনতে চাপের মুখে পড়বেন। স্ত্রীর গহনা, গরু, ও সম্পদ বিক্রি করে কৃষকরা সার কেনেন। তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রী জানান, আমরা চেষ্টা করবো অন্য ভাবে পুষিয়ে দিতে। বীজেও আমরা প্রণোদনা দিয়ে থাকি। তা অব্যাহত থাকার। আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শর্ত মেনে বাংলাদেশকে জ্বালানি তেল, সারসহ বিভিন্ন পণ্যের ভর্তুকি কমানো ও দাম বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু এ মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষিপণ্যের উৎপাদনেও যে খরচ বাড়বে, সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে না। সারের দাম বাড়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদনের দাম কতটা বাড়বে তা হিসেব করে ব্যবস্থা নিলে সংকট নিরসন করা সহজ হয়। এসব বিষয়ে গবেষণা করে ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়। কিন্তু তা না করে শুধু আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মূল্য সমন্বয়ের কথা বলে কৃষকদের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা দেয়া কতটা যৌক্তিক?