দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে আয়বৈষম্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘খানার আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২’-এর প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী আয়বৈষম্যের পাশাপাশি গ্রামে মানুষের ব্যয় ও পরিবারভিত্তিক ঋণগ্রহণও বেড়েছে। বিবিএস’র প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের হিসাবে সার্বিক দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পল্লী অঞ্চলে ২০ দশমিক ৫ এবং শহরে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে অতি দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে জাতীয়ভাবে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে উদ্বেগজনক হলো, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমলেও একই সমান্তরালে বৃদ্ধি পাঁচ্ছে আয়বৈষম্য। বিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-২০২২ সালে আয়বৈষম্য বেড়েছে, যেটি গিনি সহগের মান (বিশ্বব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি) অনুযায়ী, শূন্য দশমিক ৪৯৯। ২০১৬ সালে এটি ছিল শূন্য দশমিক ৪৮২ এবং ২০১০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮। বস্তুত ৭০ দশকে একটি ধারণা ছিল, অর্থনীতিতে কিছু বৈষম্য থাকা ভালো। আয় যাদের বেশি হবে, তারা বেশি সঞ্চয় করবেন আর বেশি সঞ্চয় হলে বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন। এভাবে বিনিয়োগ বাড়লে প্রবৃদ্ধি বাড়বে এবং তাতে মানুষের আয়ও বাড়বে। এ ছাড়া আরেকটি মতবাদ ছিল, দেশ উন্নত হলে বৈষম্য বাড়বেই, যা পরে আবার কমে আসবে। তবে দুটি মতবাদকেই ভ্রান্ত অভিহিত করে এ যুগের অর্থনীতিবিদরা বলছেন-বাস্তবতা হলো, বৈষম্য কম থাকলেই বরং প্রবৃদ্ধি বেশি হবে। মূলত সবার মধ্যে প্রবৃদ্ধির সুফল সমানভাবে বণ্টিত হলেই আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে। বৈষম্য পৃথিবীর সর্বত্রই বিরাজমান। এজন্য বিশেষভাবে দায়ী নব্য উদারবাদ ধারণায় অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটানোর প্রক্রিয়া। বর্তমানে পৃথিবীর ধনী ১ শতাংশ মানুষের কাছে রয়েছে পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ, আর ৯৯ শতাংশের কাছে বাকি অর্ধেক। বাংলাদেশের অবস্থা যদিও এত খারাপ নয়, তবে এখানেও আর্থ-সামাজিক বৈষম্য প্রকট। বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রবৃদ্ধি কাদের কাছে যাচ্ছে? দেশের জনসংখ্যার ছোট একটা অংশ আরও ধনী হচ্ছে এবং ব্যাপক অংশ দেশের উন্নয়নে ন্যায্য অংশীদারত্ব থেকে বঞ্চিত থাকছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এ লক্ষ্যে উন্নয়ন ভাবনা ও কর্মসূচি প্রণয়নে সরকারকে জনকল্যাণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে।