শুষ্ক মৌসুমে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসায় কাপ্তাই- বিলাইছড়ি নৌ পথে বোট চলাচলে মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন চালক এবং যাত্রীরা।
বিশেষ করে বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি হতে ফারুয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কি:মি: নৌ পথে পানির স্তর এতই নীচে নেমে গেছে, অনেক জায়গায় ছোট ছোট বোট দিয়ে চলাচলরত যাত্রীদের বোট থেকে নামিয়ে দিয়ে টেনে টেনে বোট চালাতে হচ্ছে।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় বিলাইছড়ি উপজেলার ১নং বিলাইছড়ি সদর ইউনিয়ন এবং ২নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়ন এর মধ্যবর্তী কেরনছড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এই অংশে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর এতই কমে গেছে যে, ছোট টেম্পো বোট হতে যাত্রীদেরকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সময় চালক ও যাত্রীরা একসাথে বোটকে টেনে নিয়ে ঐ অংশটুকু পাড় করছেন। শুধু কেরনছড়ি এলাকা নয়, এই নৌ পথে কেংড়াছড়ি, গাছকাটছড়া, বিলাইছড়ি সদরসহ অনেক জায়গায় হ্রদের পানির স্বল্পতায় নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।
এদিন কেরনছড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক পাহাড়ি বাঙালী নারী ও পুরুষ শ্রমিক তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদ হতে মাটি অপসারণ করে হ্রদের গভীরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আবার অনেক শ্রমিক নৌ চলাচলে সহযোগিতা করছেন।
তাদের একজন গোপাল দাশ জানান, সরকারের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর আওতায় আমরা সকাল থেকে এই কেরনছড়ি এলাকায় হ্রদ হতে মাটি অপসারণ করে হ্রদের গভীরতা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। কথা হয় মহিলা শ্রমিক আনোয়ারা বেগম ও অমর কান্তি চাকমা এবং সোনারাম চাকমার সাথে। তারা জানান, আমরা বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে হ্রদের যে অংশে পানি কমে গেছে সেই অংশে মাটি তোলার কাজ করছি।
এই নৌ পথে চলাচলকারী যাত্রী মো: শহীদ মাইজভান্ডারি ও নৃত্য শিল্পী সঙ্গীতা দত্ত এনি জানান, বিশেষ করে জানুয়ারি হতে মে মাস পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর কমে যাওয়ায় আমাদের চলাচলে বেশ অসুবিধা পোহাতে হয়।
বোট চালক মো: নয়ন জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে হ্রদের পানি স্বল্পতায় আমরা স্বাভাবিক গতিতে বোট চালাতে পারছি না। আর মাঝে মধ্যে ডুবো চরে আটকে গিয়ে মারাত্মক সমস্যার পড়তে হচ্ছে আমাদের।
এই কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা ১নং বিলাইছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান জানান, এই মৌসুমে কাপ্তাই-বিলাইছড়ি ও রাঙ্গামাটি নৌ পথে চলাচলকারী যাত্রীরা বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হন। তাই ৪০ দিনের কর্মসূচি সৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের যেখানে নাব্যতা কমে গেছে সেইখানে শ্রমিক দিয়ে হ্রদ হতে মাটি অপসারনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও নৌ চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিগত কয়েক বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে জরিপ করে গেছে যেখানে নাব্যতা কম, সেইখানে ড্রেজিং করবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয় নাই।
বিলাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: শামসুদ্দিন জানান, কেরনছড়ির ঐ এলাকায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীতে সর্বমোট ১শত ৬৮ জন শ্রমিক কাজ করে প্রানান্তকর চেষ্টা করছেন যাতে নৌ চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, বিলাইছড়ি উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের উদ্যোগে ব্যাহত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস অব্যাহত আছে। এই কাজে সংশ্লিষ্ট সাধারণ মানুষ, শ্রমিক ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই দু:সাধ্য কাজ সাধিত হচ্ছে। এইজন্য আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সকলকে ধন্যবাদ জানাই।