পদ্মাসেতুর সুফলের কারণে এবারও স্বস্তির ঈদযাত্রা শুরু করেছেন বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী। অল্পসময়ের মধ্যে মহাসড়ক দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেছেন ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা ঘরমুখো মানুষ। এরইমধ্যে মহাসড়কে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আরও সুযোগ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরমুখো বাইকারদের।
তবে পদ্মাসেতু ব্যবহার করে মোরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরা বাইকারদের এবারই শেষ সুযোগ বলে দাবি করেছেন অধিকাংশ বাইকাররা। এজন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মেনে সকল বাইকারদের পদ্মাসেতু ব্যবহারের জন্য জোর দাবি করেছেন ঢাকা থেকে বরিশালে আসা কমপক্ষে অর্ধশত বাইকাররা। একইভাবে নৌপথেও ঘরমুখো যাত্রীদের অতীতের বিরম্বনা পোহাতে হয়নি। ফরে ঈদণ্ডউল ফিতরকে সামনে রেখে স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ।
সূত্রমতে, ধারনা করা হচ্ছে আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হতে পারে পবিত্র ঈদণ্ডউল ফিতর। তবে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ১৯ এপ্রিল থেকে কর্মদিবস শেষ হয়েছে। তাই ছুটি পেয়েই নাড়ির টানে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতুর সুফলে স্বল্প সময়ে ঘরে ফিরতে পেরে খুশি সবাই।
ঢাকা থেকে এসে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল নথুল্লাবাদে স্বপরিবারে অপেক্ষারত ঝালকাঠিগামী যাত্রী মোসাদ্দেক বিল্লাহ বলেন, ময়মনসিংহ থেকে পরিবহনে বরিশালে এসে পৌঁছেছি। অন্যসময়ে মহাসড়কে বিশেষ করে মাওয়া কিংবা আরিচার ফেরীঘাটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পদ্মাসেতুর বদৌলতে সেসব ভোগান্তি এখন কেবই স্মৃতি। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লাবিব পরিবহনে অতীতে ভাড়া আট থেকে নয়শ’ টাকা রাখা হলেও এবার ঈদ যাত্রায় ১১শ’ টাকা করে টিকিটের মূল্য রেখেছে। এ ছাড়া বাসে ৪০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলে স্টাফরা কমপক্ষে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে এসেছে। একই অভিযোগ করেন ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনে বরিশালে আসা যাত্রী নাজমুল সানী। তিনি বলেন, অন্য সময়ে পাঁচশ’ টাকা টিকিট হলেও এখন আটশ’ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেই প্রশাসনের কোন নজরদারি। এমনকি মহাসড়কেও কোনো চেকপোস্ট না থাকায় প্রতিটি বাসে নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। এগুলো নজরদারি না হলে বড়ধরনের দুর্ঘটনায় আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ইশরাক আক্তার নামের অপর যাত্রী বলেন, আগে ঈদের সময় চরম ভোগান্তির মধ্যে লঞ্চে আসতে হতো। এখন পদ্মাসেতুর সুফলের কারণে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত মহাসড়কটি সরু হওয়া সত্বেও প্রতিটি পরিবহন মহাসড়কে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে। এমনকি ঝুঁকি নিয়ে ওভারটেকিং করায় বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তিনি পরিবহনগুলোর বেপরোয়াগতিতে চলাচল বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তাদের কাছে বাস মনিটরিংয়ের জোর দাবি করেছেন।
ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে বরিশালে আসা বাইকার মাকসুদ আলী সুমন বলেন, বাইকারদের ভুলের কারণে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছিলো সরকার। পরবর্তীতে বাইকারদের দাবির মুখে পূর্ণরায় শর্তসাপেক্ষে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগে এ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ঘরমুখো বাইকাররা বাড়তি আনন্দে বাড়ি ফিরছেন। তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে মোরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরা বাইকারদের সকলকেই মনে করতে হবে এবারই এটা শেষ সুযোগ। সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মেনে সকল বাইকারদের পদ্মাসেতু ব্যবহারের জন্য তিনি জোর দাবি করেন।
নৌপথেও স্বস্তি ॥ বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের বরিশাল নদী বন্দরের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, সারাবছরের যাত্রী খরা কিছুটা কমেছে। আগের তুলনায় ঈদ উপলক্ষে কিছু সংখ্যক যাত্রী বেড়েছে। তবে একবছর আগেও লঞ্চে যে ভয়ঙ্কর রকমের চাঁপ ছিলো তা নেই। ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তির সাথে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারছেন। তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা থেকে ঢাকাণ্ডবরিশাল রুটের সাতটি লঞ্চ, দুটি ভায়া এবং একটি সরকারি স্টিমার যাত্রী নিয়ে বরিশালে পৌঁছেছে।
ঢাকা থেকে স্বপরিবারে লঞ্চে বরিশালে আসা যাত্রী আল-মামুন বলেন, সদরঘাট পর্যন্ত আসতে কিছুটা কষ্ট হলেও সদরঘাটে নেমে আগের মতো ভিড় চোখে পরেনি। আগের মতো এখন আর কেবিন বুকিং করতেও ঝামেলা পোহাতে হয়নি। তাই এবারই ঈদে স্বস্তিতে বরিশালে পৌঁছতে পেরেছি।
একাধিক যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালগামী লঞ্চগুলোতে ডেক যাত্রীদের কাছ থেকে চারশ’ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১২শ’ টাকা, ডাবল কেবিন ২২শ’ টাকা ও ভিআইপি কেবিন ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। এতেই যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
সুন্দরবন নেভিগেশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবুল কালাম ঝন্টু বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ার পরেও লঞ্চ ব্যবসায় তেমন কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। কিন্তু হঠাৎ করে তেলের দাম বৃদ্ধির ফরে প্রতিটি ট্রিপে লঞ্চ মালিকরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) এসএম তানভীর আরাফাত জনকণ্ঠকে বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকায় ঘরমুখো মানুষ যেন নিরাপদে এবং ভোগান্তি ছাড়া নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারেন তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সড়কে যেন গাড়ি রেখে কেউ ভোগান্তির সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।