আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পাঁচদিন পর বৃহস্পতিবার বরিশালে এসেছেন নৌকার প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।
ওইদিন সকালে তিনি ঢাকা থেকে সড়কপথে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়ে বেলা ১১টার দিকে নগরীর ৩০ নাম্বার ওয়ার্ডের গড়িয়ারপাড় এলাকা পৌঁছেছেন। এ সময় গাড়িবহরের সাথে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কৃষিবিদ আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর বরিশালে আগমনকে ঘিরে মহানগরীতে স্মরণকালের সর্ববৃহত শোডাউন করতে আগে থেকেই তার সমর্থকরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। এজন্য নগরীর বিভিন্নস্থানে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। লাগানো হয়েছে তার ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন। সবমিলিয়ে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থকরা এখন পুরোপুরি উজ্জীবিত হলেও বর্তমান মেয়রপন্থি মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যক্রম শুরু করা হয়নি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে স্বাগত জানাতে নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন কালাম মোল্লার নেতৃত্বে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গড়িয়ারপাড়ে শোডাউন করা হয়। গড়িয়ারপাড় থেকে সু-সজ্জিত গাড়িবহর নিয়ে আনন্দ মিছিল সহকারে বরিশালের নেতাকর্মীরা খোকন সেরনিয়াবাতকে বরণ করে নগরীর নয়টি স্পট হয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন।
নগরীর সোহেল চত্বরস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসন্ন বিসিসি নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, আমার মামা স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাবা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের আদর্শ ধারণ করে আমি সকল নগরবাসীকে সাথে নিয়ে আগামীর পথ চলতে চাই। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আমি তার মর্যাদা রক্ষা করতে সচেতন বরিশালবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে। দীর্ঘদিন বরিশাল একটা দুর্ভোগের নগরী ছিল। আমার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে এই দুর্ভোগ লাঘব করার। মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেই প্রচেষ্টাও থাকবে। পাশাপাশি সারাদেশের মধ্যে বরিশাল নগরীকে প্রথম স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আগামী ১২ জুন নৌকা মার্কাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করতে তিনি সকলের প্রতি আহবান করেন।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানঅতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনাদের মাঝে খোকন সেরনিয়াবাতকে নৌকার হাল ধরার জন্য পাঠিয়েছে। তাই আগামী ১২ জুন নৌকা মার্কাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করলে প্রধানমন্ত্রীকে বরিশালকে তিলোত্তমা নগরী গড়ে দেবেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, আমরা একটি প্রতিদ্বন্ধীতামূলক নির্বাচন করতে চাই। এ প্রতিদ্বন্ধীতার নির্বাচনে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসাইনের সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক কৃষিবিদ আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ হিরণ, বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু প্রমুখ।
এরপূর্বে বেলা ১১টার দিকে শত শত মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বিরোধী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে আসা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ খোকন সেরনিয়াবাতকে বহনকারী গাড়ী বহরের শোভাযাত্রা নিয়ে নগরীর সোহেল চত্বরের গণসংবর্ধনাস্থলের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা হয়। এ সময় খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে নগরবাসীর ভালবাসায় সিক্ত হন।
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, সরকারি বিএম কলেজ ছাত্র কর্মপরিষদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান জনকণ্ঠকে বলেন, একক জিম্মি দশা থেকে বরিশাল নগরবাসীকে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তি দিয়েছেন। এজন্য আগামীর ভবিষ্যত কাণ্ডারী খোকন সেরনিয়াবাতকে নয়টি স্পটে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নগরবাসী। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর অন্যতম সমর্থক নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব জনকণ্ঠকে বলেন, দশ হাজার নেতাকর্মী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে বরণ করে নিয়েছেন। গড়িয়ারপাড় থেকে নগরীর দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্নস্থানে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। জিয়াউর রহমান বিপ্লব আরও বলেন, গড়িয়ারপাড় দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের গাড়িবহর বিএম কলেজ, নতুনবাজার, জেলখানার মোড়, সদর রোড ও অশ্বিনী কুমার টাউন হল হয়ে সোহেল চত্বরস্থ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে।
এর আগে ১৯ এপ্রিল সকালে বড় ভাই বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র সাথে তার ঢাকার বাসায় সাক্ষাৎ করেছেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। এ ব্যাপারে তিনি (খোকন সেরনিয়াবাত) জনকণ্ঠকে বলেন, বড় ভাইয়ের সাথে রাজনৈতিক কোনো আলোচনা হয়নি। মনোনয়ন পাওয়ার পর তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি।
আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ব্যক্তিগত সহকারী খায়রুল বাশার বলেন, দুই বোন হাবিবা আলম ও হামিদুন্নেছা বিউটিকে নিয়ে এমপির বাসভবনের আসেন খোকন সেরনিয়াবাত। কিছুক্ষণ পর এসেছিলেন তাদের ভাগ্নে শহীদ আরজু মনির ছেলে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এ সময় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। এতে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পান। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি বরিশালে আসেননি।
অপরদিকে বিসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পরা বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মঙ্গলবার বিকেলে মহানগর আওয়ামী লীগের এক সভায় ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে সমর্থন জানিয়ে তার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আলী হোসেন ॥ আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছেন নগরীর কাশিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন হাওলাদার। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বলেন, নগরবাসী তাকে আশ্বস্ত করেছেন এবং ব্যাপক সাড়াও দিয়েছেন। তিনি আশাবাদী, জনগণের ভালোবাসায় ভোটে বিজয়ী হয়ে নগরবাসীর একজন সেবক হয়ে কাজ করবেন।
আপিল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ ॥ আসন্ন বরিশাল করপোরেশন নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তার সমর্থকরা আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশালা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে আপিল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষসময় আগামী ১৬ মে, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শেষসময় ২১ মে। আপিল কর্তৃপক্ষের আপিল নিস্পত্তির শেষসময় ২৪ মে। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষসময় ২৫ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে। আর আগামী ১২ জুন সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। আর প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা।
সূত্রমতে, বরিশাল সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ওইবছরের ১৪ নভেম্বর। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে আগামী ১৪ মে।