দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও তার এক সহযোগী কর্তৃক ফুলবাড়ী গোলাম মোস্তফা (জিএম) পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় বিদ্যালয় থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পুলিশি বাঁধায় পড়ে বিক্ষোভ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ব্যানার, প্লাকার্ডসহ ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিদ্যালয়ের অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী সিহাব সংগ্রাম ও শিক্ষার্থী মারিফুল ইসলাম বলে, ‘গত ১৮ এপ্রিল বিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর চাল বিতরণকালে পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন ও তার সহযোগি শোয়েব পাপ্পু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেনকে লাঞ্ছিত করেছেন। তার পাঞ্জাবি-পায়জামা খুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।’
লাঞ্ছিতের শিকার প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেন বলেন, গত ১৭ এপ্রিল পৌরসভার মেয়র মাহমুদ আলম লিটনের অনুরোধে ঈদের ভিজিএফের চাল বিতরণের জন্য বিদ্যালয়ের হলরুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার জন্য অন্য শ্রেণিকক্ষগুলো সীট বসানোর কারণে চাল বিতরণী কার্যক্রমে সেই শ্রেণিকক্ষগুলো বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। পরদিন ১৮ এপ্রিল সকালে মেয়রের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের হল রুমে ভিজিএফের চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরপর দুপুর আড়াইটায় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান, মেয়র মাহমুদ আলম লিটন নিজ খেয়ালখুশি মতো বিদ্যালয়ের অফিস সহায়কদের দিয়ে অন্য শ্রেণিকক্ষগুলো খুলে নিয়ে চাল বিতরণ কার্যক্রম করছেন। তার অনুমতি ছাড়া অন্য শ্রেণি কক্ষগুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক রাব্বী ও দপ্তরী মহসিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন তার সহযোগী শোয়েব পাপ্পুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে চড়ায় হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ লাঞ্ছিত করেন। বিষয়টি বিদ্যালয়ের অন্যান্য অফিস সহায়ক ও দপ্তরীসহ চাল নিতে আসা শত শত মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। বিষয়টি জানার পর শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
এব্যাপারে শোয়েব পাপ্পু বলেন, প্রধান শিক্ষককে কোনোভাবেই লাঞ্ছিত করা হয়নি বা কোনো প্রকার অশালীন ভাষায় কথাও বলা হয়নি। ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে পৌরএলাকার ৪ হাজার ৬২১ জন অসহায় দুস্থের মাঝে ১৮ এপ্রিল গোলাম মোস্তফা স্কুলে চাল বিতরণ করা হয়। এর জন্য আগের দিন প্রধান শিক্ষকের সাথে মুঠোফোনে অবগত করা হয়েছে। তখন প্রধান শিক্ষক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য সিট প্ল্যান করা হয়েছে। সেজন্য রুমে বিতরণ করা যাবে না আপনি হলরুম খুলে দিচ্ছি সেখানে বিতরণ করেন। ১৮ এপ্রিল আমি সেভাবেই হলরুমে কার্যক্রম শুরু করি। তখন প্রধান শিক্ষক আমার সাথে দেখা করে দিনাজপুর চলে যান। প্রখর রোদের মধ্যে চাল বিতরণকালে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আমি বিদ্যালয় ঘুরে দেখি ওই শ্রেণিকক্ষগুলোতে কিছু শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। তখন শ্রেণি কক্ষে ঢুকে দেখি কোনোপ্রকার সীট প্ল্যান করা হয়নি। তখন আমি পিয়নকে বলি শ্রেণিকক্ষগুলো খুলে দিতে। তখন তারা খুলে দেন। আমিসহ (মেয়র) দুইজন পুলিশ একটি গাছের নিচে বেঞ্চ নিয়ে বসেছিলাম। পরে আড়াইটায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি এসে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন। তখন আমি প্রধান শিক্ষক প্রধান শিক্ষককে বলি যে শ্রেণিকক্ষগুলো আমি খুলিয়েছি। প্রচ- গরমের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল তাই। তখন প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন আপনি কে? সেসময় আমার সাথে থাকা শুভাকাঙ্খিরা বলেন আপনি মেয়র সাহেবকে চেনেন না উনি কে। তখন তাদেরকেও বলেন আপনি কে? আমি আমার স্টাফের সাথে কথা বলছি। এর একপর্যায়ে বাকবিত-া শুরু হয় উভয়ের মধ্যে। সেখানে কোনোপ্রকার অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক মিথ্যা কথা বলছেন। সেদিনের পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী তিনিই (প্রধান শিক্ষক)। উপরোন্ত প্রধান শিক্ষক বসার জন্য ব্রেঞ্চটুকুও সরিয়ে নেওয়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাল বিতরণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, এমন বিষয়টি তার জানা নেই, তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, বিষয়টি সম্মনজনক সুহারার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।