ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলায় এখন মৌসুম চলছে বোরো-ইরি ধান কেটে মাড়াই করে, সিদ্ধ করে, শুকিয়ে কৃষকরা সংরক্ষণের ব্যাস্ত সময় পার করছে। কেউ কেউ তাদের ঘরের একটি গোডাউনে বা কক্ষে বিশেষ ভাবে তৈরি করে তাতে ধান সংরক্ষণ করেন। একে আবার স্থানীয় ভাষায় গোলাঘরও বলেন থাকেন কৃষকেরা। ধান, চাল, গম সংরক্ষণের বড় পাত্র বাঁশের তৈরি গোলা যাকে স্থানীয়রা ডোল বলেও ডাকে। বাঁশ দিয়ে এ ধরনের ডোল বা গোলা তৈরি করা হয়। গ্রামে কৃষকরা এ গোলায় ধান,ভুট্টা সহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণ করে থাকে। সারা বছর ধান সংরক্ষণ করতে গোলা বা ডোল খুবই উপযোগী। ধানের মৌসুমে ধান কেটে শুকিয়ে গোলাজাত করা হয়। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে রোদে শুকিয়ে ধান ভাঙ্গানো হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলার রামনগর গ্রামের মহিদুল ইসলাম বলেন, একসময় গোলা ভর্তি ধান না থাকলে গ্রামের কৃষক পরিবার সেই বাড়িতে ছেলেমেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত দিতে আগ্রহী হতেন না। এখন পুরো এলাকা খুঁজেও একটি পরিবারে গোলা পাওয়া যাবে না। একসময় গোলায় ধান রেখে গোলার মুখ মাটি দিয়ে লেপে বন্ধ করে রাখা হতো। আবার প্রয়োজন হলে গোলা থেকে ধান বের করে প্রয়োজনীয় কাজ করা হতো। সে সময় সমাজ ব্যবস্থা এখনকার মতো এত উন্নত ছিল না। তখন চোর ডাকাতের ভয়ে মানুষ গোলার ভিতর স্বর্ণর গহনা ও টাকা পয়সাও লুকিয়ে রাখতো। একটি বড় গোলায় ৭০ থেকে ৯০ মন আর একটি ছোট গোলায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ধান সংরক্ষণ করা যেতো। গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ এ যেন বর্তমান প্রজন্মের কাছে কালজয়ী কোনো উপন্যাস। যেটা একসময় বাস্তবে ছিল, আজ তা প্রায়ই বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধানের গোলা কালের গর্ভে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পর্যায়ক্রমে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পালকি, ধানের গোলা, কাঁসা-পিতল, ধামা, পেলে, কুলা, ধান ঝাড়ার পাত্র, গরু/ঘোড়া দিয়ে চালানো হয় তেলের ঘাইন ও ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়িসহ অনেক কিছুই আজ বিলুপ্তির পথে।