পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নিজ কর্মগুণে স্বাবলম্বী সংগ্রামী মোছাঃ সৈয়দা রেখা। বর্তমানে রেখার বয়স প্রায় ৩৮ বছর। তার একমাত্র ছেলে আল তানুর জান্না তেঁতুলিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ ১ম বর্ষের ছাত্র। তিনি ৪নং শালবাহান ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোস্তানছের রহমান’র মেয়ে।
আমাদের প্রতিবেদকের আলাপ-চারিতায় উঠে আসে রেখার সংগ্রামী জীবনের কথা। তার মতে ২০০২ সালে সবে মাত্র দাখিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। রূপ লাবণ্যে ভরা কৈশোর জীবনে স্বপ্ন ছিল লেখা পড়ায় উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে ভাল কিছু করার। কিন্তু বিবাহের কারণে শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনে তার স্বপ্নপূরণ হয়নি। ওই বছর তাকে ঠাকুরগাঁও জেলার খোচাবাড়ি গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে গার্মেন্টস কর্মী শফিকুল ইসলামের সংগে বিয়ে দেন। তাকে বাড়িতে নেয়ার দু’বছরে গার্মেন্টসকর্মী শফিকুল আরও ৩টি বিয়ে করেন। পরিবারে খাওয়া নেওয়ার অভাব অনটন লেগে আছে। ইতোমধ্যে সে অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়ে। অন্যদিকে স্বতিনের সংসারে তার উপর মানসিক ও শারীরিক নানামুখী নির্যাতন করে। স্বামীর এতসব নির্যাতন সহ্য করে সংসারে একটু সুখের আশা। ২০০৩ সালে তার কোলে একপুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু শিশু সন্তান ঘরে আসার পরও কপালে সুখ জুটেনি। বরং দিনদিন স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। বিয়ের ২ বছরের মাথায় ২০০৪ সালে স্বামীর সংসারে নানামুখী অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে বিয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। কোলের শিশু সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বোয়ালমারী গ্রামে পিতার বাড়িতে।
এখানে মায়ের কাছে ছোট শিশু সন্তানকে রেখে বেসরকারি সংস্খ ইএসডিও’র অধীনে স্যানিটেশন ও হাইজিং প্রকল্পে ৭ বছর চাকুরি করেন। এখানে প্রকল্পে চাকুরি মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় বেকার হয়ে পড়েন। পরে ব্র্যাক স্কুলে শিক্ষা প্রোগ্রামে চাকুরি নিয়ে ৩ বছরের মাথায় ব্র্যাক আইন সহায়তা কেন্দ্রে প্রমোশন নেন। আইন সহায়তা প্রকল্পে ২ বছর শেষ হলে পুনরায় শিক্ষিকা হিসেবে আশা সংস্থায় ২ বছর চাকুরি করেন। এই চাকুরির স্বল্প বেতন দিয়ে পরিবারে ছেলে ও তার ভোরন করেন। পরবর্তীতে বেসরকারি সংস্থায় প্রকল্প গুটিয়ে নিলে নিজ উদ্যোগে গ্রামে টিউশনী করেন। পাশাপাশি হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন বাড়িতে নানান ধরনের সবজি চাষবাদ শুরু করেন। এবছর পৈতৃক কুড়ি শতক জমিতে আকাশি মরিচ চাষাবাদ করেছেন। মরিচ চাষাবাদে সার-বীজ ও কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ক্ষেতের পাকা মরিচ তুলে এবং তা শুকনা করে ৪ থেকে ৫ মণ ঘরে তুলার আশা। যদি প্রতিমণ শুকনা মরিচ বাজারে ১৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয় তবে সব খরচারিদ বাদ দিয়ে লাভ হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। রেখার অভিযোগ তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় মহাসড়কের পাঁচশত গজের মধ্যে তার মরিচ ক্ষেতের অবস্থান হলেও উপজেলা কৃষি অফিসের সংশ্লিস্ট ইউনিয়ন বা ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কেউ একদিন ক্ষেত দেখতে যায়নি। ক্ষেতে নানামুখী রোগ-বালাই দেখলে স্থানীয় সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীর পরামর্শ নিয়েছেন। কিন্তু কৃষি অফিসের লোকজনের সহযোগিতা পেলে আরও বেশি ফলন পাওয়া যেত। বর্তমানে সংগ্রামী রেখা উপজেলা মহিলা বিষয় অধিদপ্তরের অধীনে ফেশন ডিজাইন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। কৃষি চাষাবাদের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ শেষে স্বল্পসূদে ঋণ সহায়তা পেলে একটি পোষাক ডিজাইন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন।
উপজেলা পরিষদ চেযারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারীদের উন্নয়নে যত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়েছেন সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে বাংলার প্রতিটি ঘরে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জিডিপিতে নারীর কর্মের অর্থনৈতি স্বীকৃতি পাবে।