ভয়াবহ মাদকের মরণ ছোবলে আক্রান্ত বাংলাদেশ। শহর, নগর, বন্দর, জেলা, উপজেলা পেড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত ব্যাপক হারে এর বিস্তার ঘটেছে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে আমাদের যুব ও ছাত্র সমাজ। এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা পাঁচ্ছেনা আমাদের শিশুরাও। একটি দেশের যুব সমাজ যদি মাদকের কাছে পরাজিত হয় তবে তা দেশের জন্য ডেকে আনে মারাত্মক পরিণতি। মাদক ধীরে ধীরে একটি সমাজকে পঙ্গু করে দেয়। শিক্ষিত-অশিক্ষিত ও বয়স নির্বিশেষে সবাই মাদকের কাছে শিকার হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্মুখিন হয় উঠতি বয়সের তরুনরা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী এসব তরুণরা ক্রমেই ঝুকে পড়ছে মাদকের দিকে। ‘মাদকদ্রব্য’ বর্তমান সমাজে যেমন সংকট সৃষ্টি করছে ভবিষ্যতে এর বিরুপ প্রতিফলন দেশের মণুষ্য সমাজকে এক ভয়াবহ সংকটের মুখে ঠেলে দেবে। বাংলাদেশে নেশাদ্রব্যের বিস্তার জ্যামিতিক হারে যেমন বাড়ছে তেমনি মাদকাশক্তের সংখ্যাও অনরূপ আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এই মাদক সেবীদের মধ্যে রয়েছে প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক, ছাত্র, পেশাজীবি শ্রমিক, চাকুরীজীবি, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, ও রাজনীতিবিদ। যদিও মাদক দ্রব্যের কেনা-বেচা করা আইনত: নিষিদ্ধ এবং সরকারি বিধি নিষেধ আছে। এর পরেও গোটা দেশেই অবাধে মাদকদ্রব্যের বিকিকিনি চলছে। আইন থালেও এর প্রয়োগ নেই কোথাও।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর থাকলেও নেই তার তৎপরতা। অবৈধ মাদক দ্রব্যের চোরাচালান ও বিক্রি কোথাও বন্ধ নেই। নেশা একটি ভয়ানক সামাজিক অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই অভিশাপ সুস্থ পরিবারকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের মুখে। সারাদেশে এমন বহু পরিবার আছে যেগুলো এই নেশার কারণে অতিষ্ট। নেশার দংশনে কেউ কেউ অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে নানা অসামাজিক কাজে। লিপ্ত হচ্ছে সন্ত্রাসী, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি সহ নানা অপরাধে। সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। পরিবারে সৃষ্টি করছে অশান্তি। মাদককে নিয়ন্ত্রন না করা গেলে দেশের সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়বে। আইন থাকার পরও কমছেনা মাদকদ্রব্যের ব্যবহার, কমছেনা পাঁচার ও এর সাথে জড়িত অন্যান্য অপরাধ কর্মকান্ড। কিন্তু সর্ষের ভেতর ভূত থাকলে ওঝার পক্ষে ভূত তাড়ানো কঠিন। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির প্রভাবশালী থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য এবং স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গড়ে উঠেছে মাদকের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও সিন্ডিকেট। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযান যেন ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মত। মাদক ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক সাইনবোর্ড ব্যবহারকারী ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সম্পর্ক থাকায় তারা যা ইচ্ছে তাই করার সুযোগ পাঁচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এমনকি আরো উচ্চপর্যায়ে বিতরণ করা হয় মাদক ব্যবসার বখরা। তবে সবাইকে মাদকদ্রব্য দমন ও প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন করে যেন কোনো তরুণ-তরুণী মাদকের জালে জড়াতে না পারে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। জনগণকে সচেতন করে তুলতে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদক সীমান্ত দিয়ে আসার পথ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে যারা আসক্ত তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।