দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বৈশাখ মাসের প্রচন্ড খরা ও দাবদাহে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। টানা কয়েকদিনের প্রচন্ড দাবদাহে জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ঝরে পড়ছে আমের গুটি। ভূট্টা, পাটসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে বাগান মালিকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অনেকে আমের গুটি ঝরে পড়ারোধে বাগানে পানি সেচ দিচ্ছেন। তাতেও তেমন কোন কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৯৩৮ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিকটন।
কৃষি বিভাগ আপদকালীন এ দুর্যোগে দিনে অন্তত দুই বার বাগানে পানি সেচ ও আমের ডগায় পানি ছিটিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কয়েকজন আম চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে আম গাছগুলোতে ভালোই আমের মুকুল ধরে ছিল। পরিচর্যা করায় সেগুলো টিকেও ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রচন্ড খরায় পানি শুন্যতার কারণে আমের বোঁটা লাল হয়ে গুটিগুলো আস্তে আস্তে মাটিতে ঝরে পড়ছে। তারা আরো জানান, যদি এমনিভাবে আম ঝরে পড়তে থাকে তাহলে আমাদের ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। এ নিয়ে আম বাগান মালিক ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এ সময় আমের গুটি বড় হয়। কিন্তু প্রচন্ড তাপদাহের কারণে আমের গুটিগুলো ঝরে পড়ে যাচ্ছে। তারপরেও অনেকে গাছের পরিচর্যা করছেন। কিছু বাগান মালিক ডিজেল চালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিচ্ছেন। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সেচ দিতে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে।
কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছের নিচে আমের গুটি বিছিয়ে পড়ে আছে। কয়েকজন মৌসুমী আম ব্যবসায়ী ও চাষি জানান, প্রতিবছরই আমরা আম চাষ করি। কিন্তু এ বছরের মতো এমন প্রতিকূলতার মধ্যে কোনোবারও পড়িনি। মৌসুমের শুরুতেই গাছে মুকুল ভরা ছিল। আমের গুটিও ভালোই ধরেছিল। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার দরুণ গুটিগুলো ঝরে পড়ে যাচ্ছে। গাছে শতকরা প্রায় ৩৫-৪০ ভাগ আমের গুটি নেই। ফলে এ বছর আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা শারমিন জানান, গত কয়েক মাস ধরে আকাশের বৃষ্টি হয়নি। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাপমাত্রাও বেশি। অতিরিক্ত খরার কারণে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। বাগানের মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আম চাষিদের সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে বাগানগুলোতে শতভাগ সেচ দেয়া অসম্ভব। দ্রুত সময়ের মধ্যে আকাশের বৃষ্টি না হলে আমের ফলনে বিপর্যয় হতে পারে।