প্রতিবছরের মতো এবছরেও চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটতে ছুঁটছেন বিভিন্ন জেলায়। এসব শ্রমিকরা জানান, আমাদের উপজেলায় ধান পাকতে আরো অন্তত মাসখানেক সময় লাগবে। এ সময় বাড়িতে বেকার বসে না থেকে দলে দলে ছুটছেন বিভিন্ন জেলায়। যেসব এলাকায় ধান পেকেছে সেসব এলাকায় ধান কাটতে যাচ্ছেন তারা। স্থানীয়ভাবে ধান কাটা শুরু হলে সব শ্রমিকই এলাকায় ফিরে আসবেন। ধান কাটা শ্রমিকরা ১০-১৫ জন মিলে একটি দল করে বিভিন্ন জেলায় কোচ ও চিরিরবন্দরে ট্রেনে করে বিভিন্ন জেলায় ছুটছেন।
আব্দুল মজিদ, জয়নাল আবেদীন, আবদুর রহমান, আবদুল লতিফসহ কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চৈত্র-বৈশাখ মাসে মূলত কৃষি শ্রমিকের হাতে তেমন কাজ থাকে না। কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েন। অনেকেই সুদের (দাদন) ওপরে টাকা নেন। কেউ বা ধারদেনা করে টাকা নিয়ে আগাম ধান কাঁটার জন্য বাইরের জেলায় চলে যান। সেখানে কয়েকদিন ধান কাটা-মাড়াই করে অর্থ উপার্জন করে ১০-২০ দিন পর বাড়িতে ফিরে আসবেন। এরমধ্যে নিজ এলাকায় ধান পাকলে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করবেন। এখন প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন এনজিও এবং সংস্থায় কিস্তি দিতে হচ্ছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই ধান কাটতে দক্ষিণের জেলাগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছেন শ্রমিকরা। টাঙ্গাঈলে যাওয়ার জন্য চিরিরবন্দর উপজেলার গ্রামীণ শহর রানীরবন্দরের বাসস্ট্যান্ডে কোচের জন্য অপেক্ষা করছেন দলে দলে বিভক্ত কয়েকটি শ্রমিকের দল। তাদের মধ্যে চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই বাজার গ্রামের আবদুল মজিদ, জয়নাল আবেদীন, আবদুর রহমান জানান, প্রতিবছর আগাম ধান কাঁটার জন্য দলবেঁধে সেখানে যান তারা। এবছরও সেখানকার পরিচিত কৃষকেরা মুঠোফোনে কল করেছেন। তাই আমরা দলবেঁধে সেখানে যাচ্ছি। ধান কেটে দেয়ার জন্য বাড়িতে খাওয়া খরচ এবং কিস্তি পরিশোধের জন্য কিছু টাকা রেখে যাচ্ছি। সাথে কিছু টাকা নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা দিচ্ছি। বাড়িতে বসে না থেকে ধান কাটতে যাচ্ছি আমরা।
রানীরবন্দর বাসস্ট্যান্ড থেকে নাইট কোচ যোগে টাঙ্গাঈল যাচ্ছেন আরেকটি ধান কাটা শ্রমিকের দল। এসব শ্রমিক কাপড়ের ব্যাগে করে প্রয়োজনীয় কাপড়, কাস্তে, রশি ও ধান বহনের বাঙ্কুয়া ঘাড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ধান কাটতে। এই দলে রয়েছেন ১০ জনের মতো। তারা ধান কাটতে যাচ্ছেন টাঙ্গাঈল জেলায়। সেখানকার পরিচিত কৃষকেরা বার বার ফোন করে জানিয়েছেন, তাদের ধান পেকে জমিতে পড়ে যাচ্ছে। তাই তারা ধান কাটতে সেখানে যাচ্ছেন। অনেক শ্রমিক ধান কাটতে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সান্তাহার, সিরাজগঞ্জ, নাটোরও যাচ্ছেন।
চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ময়েন উদ্দিন শাহ জানান, প্রতিবছর এই সময়ে উপজেলা থেকে কয়েক হাজার ধান কাটা শ্রমিক বাড়িঘর ছেড়ে চলে যান। পরিবার-পরিজনদের মায়া-মমতা ত্যাগ করে তারা আগাম ধান কাটতে বাইরের জেলায় চলে যান। একসময় তারা কাজে গেলেও কোন যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে তারা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কাজে চলে যাচ্ছেন। ফলে অতি সহজেই প্রতিনিয়ত তারা বাড়ির খোঁজখবর নিতে পারছেন।