লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে কয়েক হাজার শ্রমিক পাথরভাঙা ও পাথর লোড-আনলোডের কাজের সাথে জড়িত। এ কাজে শ্রমিকদের ঝুঁকি থাকলেও তুলনামূলক মজুরি মিলে না তাদের। শ্রমিকদের এই কাজে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি রয়েছে মৃত্যুর ঝুঁকিও। মজুরি বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করেও কোনো সুফল পায়নি। এ ছাড়া শ্রমিকদের এ অঞ্চলে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত তারা।
দীর্ঘদিন ন্যায্য মজুরি পাওনা থেকে বঞ্চিত থাকা এসব শ্রমিক সোমবার(১ মে) দুপুরে বুড়িমারী স্থলবন্দর-পাটগ্রাম মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বুড়িমারী বাজার মসজিদের পাশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন বুড়িমারী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সদস্য ও বুড়িমারী সাধারণ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি সামছুল হুদা, সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, জামিয়াল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এর আগে বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য একটি শোভাযাত্রা বুড়িমারী স্থলবন্দর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শ্রমিকরা। পরে সাধারণ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও দাবি আদায়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন বুড়িমারী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ শ্রমিকেরা। এতে কয়েক হাজার শ্রমিক অংশ নেন।
শ্রমিকরা জানান, তারা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাথরভাঙার কাজ করে মজুরি পান ৪০০ টাকা। মজুরির এ টাকা দিয়ে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সন্তানদের পড়াশুনার খরচ যোগাতে পারেন না। পরিবারের লোকজনের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।পাথরভাঙার কাজে মজুরি ছাড়া বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা পান না।
সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র জানায়, লালমনিরহাটের পাটিগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে ২৭ হাজার শ্রমিক পাথরভাঙা ও পাথর লোড-আনলোড কাজ করছেন। তাদের মধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ২০ শতাংশ।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথরভাঙা শ্রমিক সোহরাব হোসেন (৫০) জানান, '১০ বছরধরে পাথরভাঙা শ্রমিকের কাজ করছি। এ কাজ করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। মরণব্যাধি সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু মজুরি খুবই কম। এ অঞ্চলে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে পাথরভাঙা শ্রমিকের কাজ করতাম না। দিনভর কঠোর পরিশ্রম করে মজুরি পাই ৪০০ টাকা। মাঝে মাঝে ওষুধ কিনতে অনেক টাকা চলে যায়।'
বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথরভাঙা মেশিন মালিক নুর ইসলাম জানান, 'এ অঞ্চলে চাহিদার চেয়ে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা কম মজুরিতেই পাথরভাঙার কাজ করেন। দুই হাজারের বেশি পাথরভাঙার মেশিনে শ্রমিকরা কাজ করেন। প্রত্যেক মেশিনে ১২ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজের সুযোগ পান। অন্যান্য মেশিন মালিকরা শ্রমিক মজুরি বাড়ালে আমিও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি করবো।'
লালমনিরহাট সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির জানান, 'পাথরভাঙা শ্রমিকদের একত্র করতে কাজ করা হচ্ছে। তাদেরকে একটি প্লাটফর্মে এনে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেওয়া হবে মেশিন মালিকদের। এতে দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। পাথরভাঙা শ্রমিকদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০০ টাকা মজুরি দাবি করা হবে।'