যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ফসলের মাঠে এখন স্বার্ণলী ধানের দোলায় ধুলছে কৃষকের স্বপ্ন। যতদূর চোখ যায় ঢেউয়ের মতো বাতাসে দুলছে সোনালী ধানের শীষ। যদিও আল্প কিছু জায়গায় বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগে ক্ষতি হয়েছে। এরপরেও বাম্পার ফলনের আশায় ধান কাটা শুরু করেছে কৃষক পরিবার।
ইরি-বোরো ধান লাভজনক ফসল হওয়ায় বোর মৌসুমকে ঘিরেই নানা স্বপ্নে বিভোর থাকে কৃষক পরিবার। আর এই সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে স্বার্ণলী ধান ক্ষেতের মাঝে। স্থানীয় বোরো চাষীদের স্বপ্নো পূরনে ইতোপূর্বে ধান কেটে বাড়ী নেয়া শুরু করে দিয়েছেন কৃষক পরিবার।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ১৪হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভা এলাকায় ১৫শ হেক্টর ও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১২হাজার ৫শ৩০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ১হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন। তবে বোরো ধানের লক্ষমাত্রার চেয়েও বেশী উৎপাদন হবে ।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো আবাদের মাঠে ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা প্রচন্ড রোদের তাপ উপেক্ষা করে ধান কাটায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন। ধান বাড়ীতে তোলার জন্য চরা(বেশী) দামে কিষান নিয়ে ধান কেটে আঠি(মুঠো) বাধঁছে। আঠি(মুঠো) বাধাঁ ধান বাকে করে আবার কেউ’বা ভ্যান নসিমনে করে বাড়ীর উঠানে নিচ্ছে। আর এ কাজে সাহায্য করছে কৃষক পরিবারের অন্য অন্য সদস্যরা। প্রচন্ড রোধের তাপ শত কষ্টের মাঝেও কৃষক পরিবারের মূখে হাসিরঁ ঝলক ফুটে উঠেছে। নেই কোন ক্লান্তির ছোয়া। নবান্নোর উৎসবে মেতে উঠেছে কৃষক পরিবার। বৃষ্টি একটু কম হলেও এ বছর বোরো আবাদে আবহাওয়া রয়েছে বেশ অনুকুলে। তাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষকরা। আগামী আর মাত্র ৬/৭দিন যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষকরা তাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল বাড়ী তুলতে পারবে বলে মনে করেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও পরামর্শে আবাদকৃত ইরি-বোরো ধান গতবারের চেয়ে ভালো ফলন হবে বলে আশা করি। যদিও কিছু কিছু অঞ্চলে ব্লাস্ট রোগে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। আর যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে তাহলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করা যায়। উপজেলা চলশিয় ইউনিয়নের কৃষক ও ইউপি সাবেক সদস্য নিজাম উদ্দিন সরদার বলেন, আমি ১০বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। এর মধ্যে প্রায় ১বিঘা জমির ধানে ব্লাস্ট রোগে ক্ষতি হয়েছে। এ বাদে বাকি বোরো ধান আবাদি জমিতে ধান বেশ ভাল হয়েছে। আর যদি ৫/৬ দিন কোন প্রকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে ভাল ভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবো।
পৌরসভার ৫নং ওযার্ডের বুইকারা গ্রামের কৃষক মোহাম্মাদ বলেন, প্রায় ৩বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। গত মৌসুমের চেয়ে এবার ধানের ভাল ফলন হয়েছে। সময় মত পানি দেয়, কিটনাশক ও বালইনাশক স্প্রে করায় ধানের কোন ক্ষতি হয় নেই। ধান প্রায় ঘরে উঠে গিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছ: লাভলী খাতুন বলেন, বোরো আবাদের সময় আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ইরি-বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে ধানে একটি রোগ দেখা দিয়েছিল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরার্মশে স্থানিয় বোরো চাষিরা প্রতিরোধেক বালাইনাশক স্প্রে করা ও কিটনাশক দেয়ায় ধান গাছের রোগটি নিয়ন্ত্রনে আসে। এবং পাশ^বর্তি এলাকার চেয়ে এ উপজেলায় বোরো ধানের রোগ কম হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের যে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল তার চেয়েও বেশী গুন ধান উৎপাদন হবে। তিনি আরও বলেন, উৎপাদিত বোরো ধানের নমুনা সংগ্রাহ করে দেখেছি। এ মৌসুমে হাইব্রিট ধান বিঘা প্রতি প্রায় ২১ থেকে ২৯ মন ও অন্য অন্য জাতের ধান বিঘা প্রতি ২৩থেকে ২৭ মন হবে।