বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসার পূর্বেই শরণখোলার বগী থেকে মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকার ১০টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে এই ভাঙন। ভাঙনের ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিশ্ব ব্যাংকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকায় উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে ৩৫/১ পোল্ডারে বলেশ্বর নদের তীরবর্তী টেকসই বেড়িবাঁধটি। এর মধ্যে রাজেশ্বর, রাজৈর বটতলা ও ফাসিয়াতলা এলাকার মূল বেড়িবাঁধেই ভাঙন আঘাত হেনেছে। নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণের ফলে ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়েও দেখা দিয়ে সংশয়। বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড: আমিরুল আলম মিলন ভঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে টেকসই বাঁধ বাস্তবায়ন সংস্থা ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)’ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষে হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বাঁধটি হস্তান্তর করা হবে। এখানে নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহনের সুযোগ নেই তাদের।
সিডরে মৃত্যুপুরী হিসেবে খ্যাত শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাউথখালীর গাবতলা এলাকায় বাঁধের পাশের প্রায় দুই বিঘা জমি আকস্মিক গাছপালাসহ নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ায় এলাকায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এছাড়া, পানি উন্নয় বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে বলেশ্বর নদের তীরে নির্মিত বেড়িবাঁধের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, তাফালাবাড়ী, রায়েন্দা ইউনিয়নের চালরায়েন্দা, রাজেশ্বর, জিলবুনিয়া, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর মারকাজ মসজিদ, বটতলা, পূর্ব খোন্তাকাটা, এবং মোরেলগঞ্জ অংশের ফাসিয়াতলাসহ ১০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় সিডরের জলোচ্ছাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে শরণখোলায় সহ¯্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরপর এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহন করে সরকার। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটার টেসকই বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি। কিন্তু তিন বছর মেয়াদের এই প্রকল্পের কাজ ছয় বছরেও শেষ করতে পারেনি চায়না ‘সিএইচডব্লিউই’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, নদীর ভাঙন দিন দিন বাঁধের কাছে চলে আসছে। হঠাৎ হঠাৎ বিশাল অংশ নিয়ে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত নদী শাসন করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমেই মূল বাঁধে ভাঙন দেখা দেবে। এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, সিইআইপি প্রকল্পের লোকজনের সার্বক্ষণিক তদারকি না থাকায় চায়নার ঠিকাদাররা তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করেছে। বাঁধটি নির্মানে অধিক হারে বালু ব্যবহার করায় বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি আমরা।
খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নের রাজৈর মারকাজ মসজিদ ও বটতলা এলাকার মূল বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত ব্লক ডাম্পিং করা না হলে কোনোভাবেই ভাঙন রোধ করা যাবে না। সিইআইপি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়হীনতায় বিশাল এই প্রকল্পের কাজে কোনো তদারকি হয়নি। যার ফলে চায়নারা দায়সারা কাজ করে গেছে। বলেশ্বর তীরের কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে নদী শাসন জরুরী হয়ে পড়েছে। তা না হলে এই বাঁধ কোনোভাবেই টেকানো যাবে না। বাঁধ হস্তান্তরের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজের মান যাচাই করার দবি জানাই।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড: আমিরুল আলম মিলন বলেন, আমি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে যাতে বলেশ্বর নদের ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ভাঙ্গন রোধে নদী শাসনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সে চেষ্টা করা হবে।
এব্যাপারে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের প্রকল্পে যে পরিমান কাজ করার কথা, তা শেষ হয়ে গেছে। ডিসেম্বরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ হস্তান্তর করা হবে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু প্রকল্পের মেয়াদ এবং কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এখানে আর নতুন করে সিইআইপির কিছু করার নেই। হস্তান্তরের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের বিষয়টি দেখবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, আপতত গাবতলা এলাকায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে জিও ব্যাগে বালু ভরে ডাম্পিং করা হবে। এ ছাড়া বলেশ্বর নদের অন্যান্য এলাকার ভাঙ্গন রোধ ও নদী শাসনের জন্য নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিছু করা সম্ভব হবে না।