গুম হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে বিসিসি নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপন।
বুধবার দুপুরে নগরীর নবগ্রাম রোডস্থ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি (রুপন) এ শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কেউ এই সরকারের বিরুদ্ধে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা-হামলা হবে, নির্যাতন হবে। আমি গুমের আশঙ্কা করছি, হয়তো বা আপনাদের সামনে আমার এটা শেষ বক্তব্য। পরবর্তী পরিস্থিতি ভয়াবহ। কারণ চাঁপটা আমার ও আমার পরিবারের ওপর হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক চাঁপ না এবং এ মুহুর্তে এনিয়ে কথা বলাটাও আমার জন্য ভয়ঙ্কর পরিনতি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী সরাসরি মাঠে নেমেছেন, প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ তার জন্য কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ নেই। অপরদিকে আমার মতো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দুদকের চাঁপে রয়েছে। যে তথ্য চেয়েছে তাতে আমাদের আতঙ্কগ্রস্থ করে রাখা হয়েছে।
দুদক কার্যালয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে রুপন বলেন, সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদক শুধু আমাকেই নয়, আমার মা ও বোনকেও তলব করেছে। তবে তাদের পক্ষে একজন আসলেই হবে বিধায় আমি এসেছি। এখানে আমার বাবা ও দাদার সময়কার সম্পত্তির হিসেব দিতে বলা হয়েছে। এটা কোন আইনে দিতে হবে আমি জানি না। আমি ২০০৪ সাল থেকে আয়কর দিয়ে আসছি। এখন তারা (দুদক) আমার ও আমার বাবার জন্মের আগের সম্পত্তিরও হিসেব চাচ্ছে। আমি যতটুকু পেরেছি দুদককে ততটুকু তথ্য দিয়েছি। আমার জন্মের আগে সম্পদের বিষয়ে আমার জানা নেই বলেও দুদক কর্মকর্তাদের অবগত করেছি।
রুপন অভিযোগ করে আরও বলেন, বর্তমান সরকার চাচ্ছে না ১৪ দল ব্যতিত কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ এতে তাদের জনপ্রিয়তার মানদন্ড কি, সেটা জনসম্মুখে উম্মোচন হবে। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পরিবারের সন্তান হিসেবে নিশ্চিন্তে বলতে চাই, এই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমার দল পাশে থাকবে। তবে এনিয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাচ্ছিনা, সময় হলে সব বলবো। দেশ তথা বরিশালের জনগণ এর প্রতিবাদ করবে বলে আমি শতভাগ বিশ্বাসী। রুপন দাবি করেন, একটি পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে হেনস্থা করার অংশ হিসেবেই দুদকে তলব কার্যক্রম চালিয়েছে। যাতে করে আমি সঠিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে না পারি।
কামরুল আহসান রুপনের অভিযোগের বিষয়ে দুদকের স্থানীয় কর্মকর্তাদের কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মোবাইল ফোনে দুদক বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কাইয়ুম হাওলাদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আহসান হাবিব কামালের দেওয়া সম্পদ বিবরণী তথ্যের কিছু বিষয়ের তথ্যাদি দিতে বলা হয়েছিল। এরজন্যই রুপনকে ডাকা হয়েছিল এবং তদন্তের স্বার্থে কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, আহসান হাবিব কামাল বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনে তিনি প্রথম ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আহসান হাবিব কামাল। আগামী ১২ জুনের বিসিসি নির্বাচনে প্রয়াত কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।