ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এক পরীক্ষা কেন্দ্রে দেড়/দুই ঘন্টা অবস্থান করে পরীক্ষার্থীদের ভয়ভীতি, হুমকি ধমকি দিয়ে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে এডিসি’র (শিক্ষা) বিরূদ্ধে। একাধিক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক বলছেন, তদন্তের নামে তিনি পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাবে আতঙ্কগ্রস্ত করে ক্ষতি করেছেন। ফলাফলে এর প্রভাব পড়বে। ইউএনও বলছেন আসন বিন্যাসে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে ওই কেন্দ্রের অফিস কক্ষেই অধিক সময় অবস্থান করেছেন এডিসি স্যার। আর এডিসি (শিক্ষা) বলছেন, নির্যাতনসহ সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে ওই কেন্দ্রের একটি অনিয়মের তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ই ছিল তদন্তের যথোপযুক্ত সময়। সত্যতাও পেয়েছি। সূত্র জানায়, চলমান এসএসসি পরীক্ষার তৃতীয় দিন গত বুধবার ছিল ইংরেজি প্রথমপত্রের পরীক্ষা। পরীক্ষার শুরূর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের (সরাইল-০৪, কোড-৪৩৮) ভেন্যু সরাইল সদর স্কুলে প্রবেশ করেন এডিসি (শিক্ষা) জিয়াউল হক মীর। সেখানে আসন পড়েছে পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয় ও বেড়তলা উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের। এডিসি কক্ষে প্রবেশ করে পরীক্ষার্থীদের নাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম জিজ্ঞেস করেন। ওঁর একজন সহকর্মীও পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। দীর্ঘ সময় অবস্থান করে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকলে পরীক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে অশ্বস্থ্যিবোধ করতে থাকে। বিষয়টি কেন্দ্রের বাহিরে ছড়িয়ে পড়লে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। প্রশ্নবানে পরীক্ষার্থীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার অভিযোগ করার বিষয় নিয়ে কেন্দ্র সচিব মো. আনোয়ার হোসেনের সাথে এডিসি’র বাকবিতন্ডা হয়। এডিসি প্রায় দুই ঘন্টা ওই কেন্দ্রে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। ওই কেন্দ্রের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী এনামুল হক সিয়াম, সুস্মিতা, জাকিয়া ইসলাম ইলমা, স্মৃতি ও ব্যবসা শিক্ষা শাখার আনাস বলেন, পরীক্ষার শুরূতেই এডিসি প্রবেশ করে প্রশ্নবানে আমাদেরকে কোণঠাসা করে ফেলেন। নাম কি? কোন স্কুলের শিক্ষার্থী? প্রবেশপত্র রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দেখা। আবার উত্তর সঠিক হয়নি বলে ধমক। পরীক্ষা থেকে বরখাস্থ করে দেওয়ার হুমকি। অনেককে লাথি মেরে ফেলে দেয়ার কথাও বলেছেন। হতবিহবল হয়ে পড়েছে গোটা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে ওঁর আচার আচরণে ও কথায় আমরা পরীক্ষা ভুলে গিয়েছি। জানা উত্তর ও লিখতে পারিনি। দেড়/দুই ঘন্টা কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন। এরপর কেন্দ্রে এসেছেন আনোয়ার স্যার। প্রতিবাদ করায় আনোয়ার স্যারের সাথেও এডিসি’র বাক-বিতন্ডা হয়েছে। অভিভাবক মো. হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, একজন এডিসি পরীক্ষা কেন্দ্রে এতক্ষণ অবস্থান ও এমন তান্ডব চালাতে আগে কোন দিন দেখিনি। আমার মেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার কথা। ওঁর এহেন আলামতে জানা বিষয়ের উত্তরও লিখতে পারেনি। জীবনের এই ক্ষতির দায়ভার কে নিবে? অভিভাবক ও সদর উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম সেলু বলেন, কেন্দ্রে একজন শিক্ষার্থীর সাথে কোন কর্তা কথা বললে সকলে লেখা বন্ধ করে ওই দিকে তাকিয়ে থাকে। এডিসি যখন শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করছিলেন তখন বাকি ৪৯ জনের লেখাই বন্ধ ছিল। পরীক্ষা চলাকালীন এমন লম্বা সময় নিয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা উনাকে কে দিয়েছে? এতে করে আমার মেয়ে সহ অগণিত পরীক্ষার্থীর বিশাল ক্ষতি হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আধা ঘন্টা সময় নিয়ে তদন্ত করতে পারতেন। ১ নম্বর কক্ষে দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক মোছা. রিনা আক্তার বলেন, এডিসি স্যার ঘন্টা খানেক ছিলেন। নিজে ঘুরে ফিরে পরীক্ষার্থীদের নাম ঠিকানা জানতে চেয়েছেন। পরে ওঁর একজন সহকারিকে দিয়েও কাজ করিয়েছেন। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, এডিসি স্যার দেড় ঘন্টা অফিস কক্ষে বসা ছিলেন। শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের পরীক্ষার্থীদের ও পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসে অনিয়মের একটি তদন্ত করতে এসেছিলেন। তদন্ত করেছেন। সিসি টিভিতে সব আছে। অযথা অভিযোগ করলে হবে না। সহকারি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জিয়াউল হক মীর সকল অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো উল্লেখ করে বলেন, নকলমুক্ত সুষ্ঠু সুন্দর পরীক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব। ওই কেন্দ্রের একটি অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। ওঁর নির্দেশেই মূলত ওই বিষয়টির তদন্ত করতে এসেছিলাম। সেই তদন্তের বিষয় গুলো যাচাই-বাছাই করার যথোপযুক্ত স্থান ছিল ওই কেন্দ্র। সেখানে কাউকে হয়রানি বা কষ্ট দেয়া হয়নি। অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। বোর্ডকে সকল বিষয় অবহিত করেছি। কেউ যদি বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন, করতে পারেন। তবে অনিয়ম ঢেকে রাখা যাবে না।