সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ভালো নেই। একদিকে জলবায়ু সংকটে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অন্যদিকে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে সুন্দরবনের পরিবেশগত পরিবর্তন লক্ষণীয়। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা হুমকির মুখে রয়েছে সুন্দরবনসহ দেশের সব বনাঞ্চল। তাই সুন্দরবনসহ দেশের সব বনাঞ্চল রক্ষায় সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। সুন্দরবন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। যা কিনা বিশ্বের বিস্ময়াবলির ঐতিহ্যের একটি অংশ। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০,০০০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। তার মধ্যে বাংলাদেশের অংশে পড়েছে প্রায় ৬২%-এর একটু বেশি। প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট নানা দুর্বিপাকে সুন্দরবন অস্তিত্ব বিপন্ন। সুন্দরবন বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় একটি সম্পদ। অর্থনীতিতে এর অবদান অপরিসীম। এই বন থাকার কারণে আজকে আমরা সৌভাগ্যবান। এটি যেহেতু রাষ্ট্রীয় একটি মহামূল্যবান সম্পদ, তাই এটি রক্ষার্থে রাষ্ট্রকে আরও সামনে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্র কখনোই এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই সুন্দরবনকে আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছি। কখনো উন্নয়নের নামে, আবার কখনো ব্যক্তি ও মুষ্টিমেয় দলগত স্বার্থের কারণে। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প যার সব থেকে প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
ভারত বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে রামপাল এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি ইতিহাসের সব থেকে একটি বিতর্কিত বিদ্যুৎ প্রকল্প। বলার অপেক্ষা রাখে না এর ফলে সুন্দরবনের বনাঞ্চল, পরিবেশ জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এমনকি এ প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদী সুন্দরবনের অস্তিত্ব টিকে থাকার জন্য হুমকিস্বরুপ। আর এই কয়লাভিত্তিক প্রকল্প পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরুৎসাহিত করা হয়। যেমন- কানাডা, ফ্রান্সে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ স্থাপনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। সময় থাকতে দাঁতের মূল্য বুঝতে হবে। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আরও কিছু কারণ আছে। তার মধ্যে অন্যতম নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া, লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, বনের ভিতরে অবৈধভাবে গাছ কাটা, হরিণ, বাঘসহ প্রভৃতি পশু-পাখি হত্যা করা। এই সমস্যাগুলো সমাধানে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি বনখেকো ও ভূমি দস্যুদের দমন করতে হবে। এখনি পদক্ষেপ না নিলে কালের খরায় সুন্দরবন তার আভিজাত্য, ঐতিহ্য, শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে ফেলবে।
সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। সঠিকভাবে একে ঢেলে সাজানো গেলে, এখান থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে বেশ ভালো অবদান রাখা সম্ভব। তাই আমাদের সবাইকে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য গভীরভাবে বুঝতে হবে। সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্য এর গবেষণার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। মিটিং ও সমাবেশের মাধ্যমে প্রান্তিক জনপদের মানুষের মধ্যে সুন্দরবনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে হবে। এই বনের গুরুত্ব সবার কাছে তুলে ধরতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাবে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জাতীয় স্বার্থেই সুন্দরবন রক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে দেশ, সুন্দরবনকে করা যাবে না শেষ।