দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ১২ জন শিক্ষকের সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতি আটকে রাখায় শিক্ষক নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের ওপর বিরূপ প্রভাব পরেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। একইভাবে অনেক শিক্ষকের চাকরি বিনাকারণে অস্থায়ী অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতির বিজ্ঞাপন দিয়েও ভিসি বোর্ড না বসিয়ে পূর্নরায় নতুন করে আবার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। ফলে যারা গত ১৫ ফেব্রুয়ারির বিজ্ঞাপন অনুযায়ী আবেদন করেছেন তাদের পদোন্নতি আরো দীর্ঘসূত্রিতায় পরেছে।
পদোন্নতি আটকে থাকা শিক্ষকরা হলেন-গনিত বিভাগের প্রভাষক ড. মহুয়া জাহান রুপা, গনিত বিভাগের প্রভাষক সুজিত কুমার বালা, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আফরোজা নাসরিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক সায়মা আফরিন লিজা, মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক সায়মা আক্তার, মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক তাসমিন জাহান, ফিন্যান্স এ- ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক নুসরাত জাহান বেনজির, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাদমান সাকিব বিন রহমান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফারজানা আফরোজ, লোক-প্রসাশন বিভাগের প্রভাষক নুসরাত জাহান নিপু, প্রভাষক তাসনিয়া সুমাইয়া ও একই বিভাগের প্রভাষক রানী সুলতানা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রভাষকরা বলেন, উল্লিখিত শিক্ষকদের সাথে একই তারিখ এবং পরবর্তীতে যোগদান করেও বিভিন্ন বিভাগের অসংখ্য শিক্ষককের অনেক আগেই পদোন্নতি পেয়েছেন। তারমধ্যে প্রাণরসায়ন বিভাগের হাসিব, ফাহমিদা সুলতানা রিমি, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ফারহানা আক্তার তানিয়া, মনিরা আক্তার, দর্শন বিভাগের শাহনাজ পারভিন, অর্থনীতি বিভাগের মামুনুর রহমান, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শাহাদাত হোসেন, ইতিহাস বিভাগের সুরাইয়া আক্তার পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু একমাত্র ভিসির কারণে ১২ জন শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে।
ববি’র এক শিক্ষক নেতা জানিয়েছেন, ১২ শিক্ষকের পদোন্নতির নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের ধীরগতি ও ভিসির রহস্যজনক আচারনের কারণে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিনাকারণে শিক্ষকের সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের ওপর বিরূপ প্রভাব পরেছে বলেও ওই শিক্ষক নেতা উল্লেখ করেন।
পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, ভিসি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের পদোন্নতি আটকে রেখেছেন। কারণ ভিসির বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তাদের পদোন্নতি তিনি আটকে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছে শিক্ষক সমিতির বর্তমান কমিটির নেতারা। তাদের নিয়ে সিন্ডিকেট করে ভিসি তার কাজ পরিচালনা করছেন।
কতিপয় শিক্ষকদের সকল অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকুল আরেফিন বলেন, পদোন্নতির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সবকিছুর একটা প্রসেস আছে। তার প্রসেসের মাধ্যমে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ প্রফেসর শাহ্ সাজেদা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অকারনে শিক্ষকের সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতি না দেওয়ার কারণে শিক্ষার মান নিন্মমুখী করা হচ্ছে। এমন কার্মকান্ডে ভিসি অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এতে প্রমানিত হয় প্রশাসন গতিশীল নয়। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেন বিষয়টি নজর দিয়ে অতি দ্রুত পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করেন এ দাবি থাকবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির সদস্য ও বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, শিক্ষার মান ও প্রশাসনে গতিশীলতা আনার জন্য শিক্ষকদের পদোন্নতি যথাসময়ে করা উচিত। তা না হলে শিক্ষার মান পিছিয়ে পড়বে। ১২ শিক্ষকের পদোন্নতির ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।