গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার ভোরে ইসরাইলি বিমান হামলায় চার শিশু ও তিন সিনিয়র জিহাদি নেতাসহ ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আহত হয়েছে ২০ জন। ফিলিস্তিনি এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এই হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সহিংসতার সর্বশেষ ঘটনা এই বিমান হামলা। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় ইসরায়েলিদের লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনিদের হামলা ও সেখানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একের পর এক প্রাণঘাতী অভিযান দেখা গেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট বলেছেন, “ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সঙ্গে কাজের মধ্য দিয়ে গাজায় ইসলামিক জিহাদের নেতাদের লক্ষ্য করে ‘সুনির্দিষ্ট' অভিযান চালিয়েছে। ইসরায়েলি নাগরিকদের ক্ষতি করা যেকেনো সন্ত্রাসীকে এর জন্য অনুশোচনা করতে বাধ্য করা হবে।” ইসলামিক জিহাদ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপকূলীয় ভূখণ্ডটির দ্বিতীয় সবচেয়ে প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই ভূখণ্ডটি সেখানকার সবচেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠী হামাসের শাসনাধীন। ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা তিন জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে তারা বলেছে, “আমরা আমাদের অবস্থান ত্যাগ করবো না এবং আল্লার ইচ্ছায় প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানগুলো আবাসিক এলাকায় ইসলামিক জিহাদের আশ্রয়স্থলগুলোতে এবং গাজাজুড়ে থাকা তাদের প্রশিক্ষণ শিবির ও সীমান্ত চৌকিগুলোতে আঘাত হানে। এ সময় কয়েক ঘণ্টা ধরে গাজাজুড়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসলামিক জিহাদের মুখপাত্র তারেক সেলমি বলেছেন, “এই বোমা হামলার জবাব বোমা হামলার মাধ্যমেই দেওয়া হবে এবং হামলার জবাব হামলার মাধ্যমেই দেওয়া হবে। এই অপরাধ শাস্তি ছাড়া পার পাবে না।” ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিমান হামলার সময় রাতের আকাশ আলো করে আগুনের শিখা জ্বলে উঠছে ও ধোঁয়া বের হচ্ছে, আর দমকল কর্মীদের ট্রাক সেদিকে ছুটে যাচ্ছে। মঙ্গলবারের এই বিমান হামলায় এক বহুল পরিচিত ফিলিস্তিন দন্ত চিকিৎসক নিজ বাড়িতে স্ত্রীসহ নিহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা তার জন্য শোক প্রকাশ করে তাকে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু ও নম্র মানুষ বলে অভিহিত করেছেন। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হেফাজতে টানা অনশন ধর্মঘট করে এক ফিলিস্তিনি বন্দি মারা যাওয়ার পর গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের কয়েক ঘণ্টা ধরে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তাতে এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন। জানুয়ারি থেকে দুই পক্ষের মধ্যে চলতে থাকা হানাহানিতে এ পর্যন্ত শতাধিক ফিলিস্তিনি ও ১৯ ইসরায়েলি ও বিদেশি নিহত হয়েছেন।