শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় কৃষকদের উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করতে ঢলতা নামে দুই মণ ধানে চার কেজি ধান ওজনে বেশি দিতে হয়। ফলে প্রতি ধান কাটার মৌসুমে বাজারে কৃষকদের ধান বিক্রি করতে এসে ওজনে ঠকতে হচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি স্থানীয় কৃষকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। নালিতাবাড়ী ‘কৃষক উন্নয়ন ফোরাম’ কৃষকদের পক্ষে এই স্মারকলিপি দেন।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৩ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এখন চলছে ধান কাটা। কেউ কেউ ধান বাজারে বিক্রিও করেছেন। সেই ধান বাজারে বিক্রি করতে এসে স্থানীয় আড়তদাররা ৮০ কেজিতে দুই মণের স্থলে ঢলতা হিসেবে আরো চার কেজি ধান বেশি নিচ্ছেন। কষ্টে অর্জিত ধান ওজনে বেশি নেওয়ায় কৃষকরা নিরুপায় হয়ে মেনে নিচ্ছেন। তবে এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় প্রায় এক ১ হাজার ৫শ কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, ভোক্তা অধিকার ও কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, দুই মণ করে (৮০ কেজি) প্রতি বস্তা ধান আড়তে নেয়ার পর পরিমাপের সময় বস্তার বদলে একটি বস্তা দেয়ার কথা থাকলেও বস্তার পরিবর্তে এক কেজি ও তথাকথিত ঢলতা নামে আরো তিন কেজি পাথরসহ মোট চুরাশি কেজি ধান কৃষকদের দিতে হয়। তখন কৃষকরা এর প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। স্থানীয় আড়তদারদের সাথে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে একটি সমাধানে আসা প্রয়োজন বলে স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন।
উপজেলার জামিরাকান্দা গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, ১ একর জমি আবাদ করে ধান তুলতে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধান পেয়েছি প্রায় ৬০ মণ। এখন বাজারে ধান বেঁচতে এসেও বিপদে পড়েছি। প্রতি বস্তায় (৮০ কেজি) চার কেজি ধান বেশি দিতে হচ্ছে। ৭২০ টাকা মণ হিসেবে ধান বেচে খরচ তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকার ধানের ওজন ঠিক করে দিলে কৃষকরা বাঁচতো।
উপজেলা কৃষক আন্দোলন ফোরামের সভাপতি মাহমুদুল আহসান বলেন, এই অনিয়মের প্রতিবাদে আমরা শতাধিক কৃষক এক সপ্তাহ ধরে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫শ কৃষকের স্বাক্ষর নিয়েছি। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধান ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
নালিতাবাড়ী বাজারের ধান চাল ব্যবসায়ী মেসার্স খালেদ এন্টার প্রাইজের সত্বাধিকারী আবদুল বাতেন বলেন, কাঁচা ধান হওয়ায় চুরাশি কেজি (প্রতি দুই মনে) হিসেবে ধান কেনা হচ্ছে। কারণ এই ধান শুকালে ৪-৫ কেজি কমে যায়। তাই বাধ্য হয়েই ধান বেশি নিতে হয়।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, প্রতি দুই মণ ধানে চার কেজি ধান বেশি নেওয়ায় কৃষকদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পেয়েছি। আশা করছি স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে এর দ্রুত সমাধান করতে পারবো।