রেললাইনে কাটা পড়ে অনেকের জীবন গেলেও বাড়েনি সচেতনতা। অসতর্কতাবশত হাঁটতে গিয়ে স্লিপারে পা পিছলে নিহতের ঘটনাও ঘটছে। সময় বাঁচানোর নামে জীবন বাজি রাখতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন। এভাবেও অনেকের প্রাণ গেছে। রোববারও একাধিক ঘটনায় ট্রেনের নিচে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কেউ সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যাচ্ছেন। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনের নিচে প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। আবার কেউ হেডফোনে গান শুনতে শুনতে ট্রেনে কাটা পড়ছেন। অরক্ষিত রেল ক্রসিং আর অসচেতনতায় ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রেনে কাটা মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছেন মানুষ। জেনেবুঝেই দুই মিনিট সময় বাঁচানোর নামে জীবন বাজি রাখছেন তারা। ঘনবসতি এলাকা দিয়ে ট্রেন চলাচলের সময় ট্রেনের হুইশেল শুনতে না পাওয়া। আঁকাবাঁকা পথে ট্রেন দেখতে না পাওয়া। ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা। নেশাগ্রস্ত হয়ে রেললাইনে চলাচল ইত্যাদি রেল দুর্ঘটনার অন্যতম কারন। রাজধানীর শ্যাওড়াবাজার, আশকোনা, মগবাজার, এফডিসি মোড়, তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী রেলক্রসিংয়ে দেখা যায় ট্রেন আসার আগ মুহূর্তে লাইনম্যান দুদিকে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা পারাপার বন্ধ করে দেন। কিন্তু ব্যারিকেডের নিচ দিয়ে কিংবা একটু দূরে লোহার বার তুলে ঢুকে পড়েন পথচারী এবং সাইকেল- মোটরসাইকেল চালকদের অনেকেই। ট্রেন কাছাকাছি চলে এলেও নির্বিকার পার হয়ে যান তারা। রাজধানীসহ আশপাশের ৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ৫৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের ২৩টি অরক্ষিত ও অননুমোদিত। এর মধ্যে কোনোটিতে নেই গেটম্যান ও সিগন্যাল বার। কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত অংশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে রেলওয়ে। কুড়িল বিশ্বরোড রেলক্রসিংয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর পরই ট্রেন আসা-যাওয়া করছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে মানুষ। গত দেড় বছরে চট্টগ্রামে রেলক্রসিংয়ে অন্তত তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ১৯ জন। এর মধ্যে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ২৯ জুলাই। ওই দুর্ঘটনায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যায় মহানগর প্রভাতী ট্রেন। এতে মাইক্রোবাসের ১৩ জন নিহত হন। এত এত ট্রেন দুর্ঘটনা এর বেশিরভাগই ঘটেছে পথচারীদের অসাবধানতার কারনে। তাই পথচারীদের সচেতন হলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমবে বলে আশা করা যায়। রেলক্রসিংগুলো নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে রেল গেট ম্যানদের আরও বেশি চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এক্ষেত্রে আরও তৎপর হতে হবে। রেল লাইনে পথচারীদের দূর্ঘনা কমবে এমটিই আশা থাকবে।