সুশাসনের অভাবে বৈষম্য ও দারিদ্র্যতা কমছে না বরং ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিন্তু সরকার বলছে দেশে দারিদ্র্যতা কমছে। আবার সাধারণ মানুষ বলছে, আগের মতো দিন চালানোই এখন দায় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে কয়েক দশকের অগ্রগতি হারিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রতিবছর আন্তর্জাতিক দারিদ্র বিমোচন দিবস পালিত হয়ে থাকে। তবে একটি দেশ বা সমাজের অগ্রগতির প্রাথমিক শর্তই হলো সুশাসন থাকা। যার অভাব রয়েছে আমাদের বাংলাদেশে। ফলে জিডিপি, মাথাপিছু আয় বাড়লেও বৈষম্যের কারণে বাংলাদেশের বিপুল মানুষ তার প্রাপ্য সুফল পাঁচ্ছে না এবং ধনী-গরিবের ক্রমবর্ধমান ব্যবধান দারিদ্র্যকে আরো আপেক্ষিকভাবে প্রকট করে তুলেছে। নগরে সম্পদের বৈষম্য যত বাড়বে ধনী ও গরিবের বিভক্তি তত প্রকট হবে। তবে গ্রামের তুলনায় শহরকেন্দ্রিক দারিদ্র্যের হার বেশি। অভাবের কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ঝরে পড়ছে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। এর ফলে বাড়ছে বাল্য বিবাহ। আবার দারিদ্র্যের এ চরম অবস্থায় তৈরি হচ্ছে একের পর এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। এর ফলে অতি-দরিদ্র মানুষের জীবন আরো হুমকির মুখে পড়ছে। এ কারণে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের পাশাপাশি দারিদ্র্যের মুখোমুখি হচ্ছে মানুষ। আবার অনেকে মনে করছেন, সুশাসন ও বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কারনেই বিদেশে টাকা পাঁচার বাড়ছে ও অনেকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হচ্ছেন।
আজকে বাংলাদেশে যে সঙ্কট চলছে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জীবনধারায় প্রতিফলিত। দেশের মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি ছাড়া আপামর জনগণের সঙ্গে কথা বললে বা তাদের জীবনমানের দিকে তাকালেই সহজে এটা বোঝা যায়। এ কারণে, আর্থসামাজিক উন্নয়নে সুশাসনভিত্তিক এক নতুন রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন অত্যাবশ্যক; যাতে বর্তমান সময়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সর্পিল গন্ডি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি। বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় ব্যর্থতার মূলে রয়েছে দুর্নীতি ও দুঃশাসন। সেই সঙ্গে দুর্বল ও ঘুণে-ধরা প্রতিষ্ঠান, অনুপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ ও দুর্বল জবাবদিহিতা। আর এই ব্যর্থতা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ শাসনে দুরবস্থা জাতীয় অর্থনীতি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
দুর্নীতি, দুঃশাসন ও বৈষম্য বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অবনতির অতল গহ্বরে, আর দেশের কঠোর শ্রমজীবী মানুষকে তাদের সম্ভাবনা ও সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাদের প্রাপ্য সামাজিক ন্যায়বিচার, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার পরিবেশ বিপন্ন করে দিয়েছে। তাই বলা যায় বাংলাদেশে উন্নয়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে দুর্নীতি কমবে, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমৃদ্ধ হবে। আর এসব অর্জন করতে হলে প্রয়োজন হবে এমন নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও কার্যসম্পাদন, যার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের পরিবর্তন আসবে ও সবার ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাই বাংলাদেশের বর্তমান শাসনব্যবস্থা বা দুঃশাসনকে সুশাসনে রূপান্তরিত এবং শাসনের ব্যর্থতার কারণগুলোকেও দূর করতে হবে।