আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারও ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ, নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসারকে প্রত্যাহারের দাবি করেছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। অপরদিকে রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
বুধবার দুপুরে জাপা মনোনীত লাঙল মার্কার প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস নগরীর ১নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে আমার দাবিগুলো উল্লেখ করে ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি দরখাস্ত ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। ভোটারদের উদ্দেশ্যে লাঙল মার্কার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে আমি মেয়র নির্বাচিত হলে বরিশাল সিটিকে একটি উৎপাদনমুখী তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো।
ইকবাল হোসেন তাপসের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী ও বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল স্বাক্ষরিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর প্রেরিত দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়েছে, আসন্ন বরিশাল সিটি কপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে। তাই জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বরিশাল সিটির বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অবশ্যই ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে ভোটগ্রহণ ও বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর ডাকযোগে পাঠানো দরখাস্তে বারিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার মো. হুমায়ূন কবিরকে প্রত্যাহারের জন্য জোর দাবি জানিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আবেদন করা হয়।
সার্বিক বিষয়ে লাঙল মার্কার প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে আগে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে আমাদের প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ পরিহার করতে হবে। রিটার্নিং অফিসারকে প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। তার আচরণে মনে হয় কোনো এক প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি কাজ করছেন।
মাঠে নেমেছে যুবলীগ ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নৌকা মার্কার পক্ষে একযোগে মাঠে নেমেছেন মহানগর যুবলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার সকাল থেকে যুবলীগের নেতাকর্মীরা নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের কর্মীসমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের সাথে একযোগে নৌকার পক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেছেন। এ সময় তারা দক্ষিণাঞ্চলে বর্তমান সরকারের সময়কার নানা উন্নয়ন চিত্র ধুলে ধরেন। পাশাপাশি এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন সিটি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জোর আহবান করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ মাহমুদুল হক খান মামুনের দিক নির্দেশনায় নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, বরিশাল সিটির উন্নয়নের স্বার্থে এবং সুস্থ্য ধারার রাজনীতির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আগে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা সভা করা হয়েছে। সভায় বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়নমূলক কাজের বিষয় ভোটারদের কাছে তুলে ধরার আহবান জানানো হয়। পরবর্তীতে এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেলক্ষে ৩০টি ওয়ার্ড যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের স্ব স্ব ওয়ার্ডের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচার প্রচারনা শুরু করেছেন। খান মামুন আরও বলেন, বরিশালের মানুষ উন্নয়নে বিশ্বাসী। তাই তারা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করবেন বলে আমি শতভাগ বিশ্বাসী। তাছাড়া সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী যখন প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই আর মনোনয়ন যখন প্রধানমন্ত্রী নিজে দিয়েছেন, তাই এখানে নৌকা বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রীকে বিজয়ী করা হবে। আর সেক্ষেত্রে বরিশালের উন্নয়নে যা যা করতে হবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই করবেন। তার কাছে নগরবাসীর কিছু চাইতে হবেনা।
হাতপাখার প্রার্থীর অভিযোগ ॥ বরিশাল সিটি নির্বাচনে নিযুক্ত রিটার্নিং অফিসার হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার প্রার্থী ও মিডিয়া সেলের সহকারী সমন্বয়কারী। মূলত হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শোডাউন করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নির্বাচন অফিস থেকে তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে লিখিত ও মৌখিক ব্যাখ্যা দিতে বলায় এ অভিযোগ করা হয়। হাতপাখা মার্কার প্রার্থীর মিডিয়া সেলের সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন শুরুর আগেই ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থীর ওপর এভাবে বিধি প্রয়োগ বিস্ময়কর। এর আগে নৌকার প্রার্থী নগরীতে শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে শোডাউন করেছেন। তখন রিটার্নিং অফিসার তাকে কেন শোকজ করেননি। তখন যদি তাকে নোটিশ দেওয়া হতো তাহলে আমরা সাবধান হয়ে যেতাম। রিটার্নিং অফিসার নৌকার প্রার্থীকে কিছু বললেন না, আর দোষ হলো হাতপাখার প্রার্থী। আমি মনে করি এই নোটিশ দেওয়ার মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। হাতপাখার প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, আমার নামে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হলেও তা এখনও নিশ্চিত করিনি। যার জন্মই হয়নি সে কী করে শোকজ পায়, সেটা আমার বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী যেখানে গত এক মাস ধরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, সেখানে তাকে শোকজ না করে আমাকে শোকজ করা হয়েছে। এরমাধ্যমে প্রমানিত হয় নির্বাচন কমিশন যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দাবি ॥ অভিযোগের বিষয় সঠিক নয় দাবি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, নৌকার প্রার্থী আমাদের কথা মেনে অনেক কর্মসূচি বাতিল করেছেন। তাকে আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে আমরা যা বলছি সেটাই সে শুনছেন। তেমনি হাতপাখার প্রার্থীকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি তা শোনেননি। রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের চোখে সব প্রার্থীই সমান। কেউ কাছের বা দূরের নন। সবার জন্য সমান আইন ও সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ইভিএম হচ্ছে স্বচ্ছতার প্রতীক ॥ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) আহসান হাবিব খান বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা প্রায় সাতশ’ নির্বাচন সম্পন্ন করেছি। এরমধ্যে ছয় শতাধিক নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করেছি। ইভিএম হচ্ছে স্বচ্ছতার প্রতীক। ইভিএম দিয়ে কেউ কোনো কিছু করতে পারেনা। ইভিএম দিয়ে আমরা সঠিকভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করেছি। গত ৯ মে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ইভিএম খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোটারকে কেন্দ্রে আসতেই হবে। আঙুলের ছাপ মেলাতে হবে। তারপরেও ইভিএম নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা কী কারণে আমি নিজেও বুঝি না। ইভিএম নিয়ে কারিগরি যতো বিশেষজ্ঞ রয়েছেন তারা সকলেই ইভিএম খুলে দেখেছেন। ইভিএম নিয়ে সন্দেহ কেন থাকবে তা আমার বোধগম্য নয়। ইভিএম দিয়ে কোনো ধরণের কারচুপি করা সম্ভব নয় দাবি করে তিনি বলেন, আমরা যে ছয়শ’ নির্বাচন ইভিএমে সম্পন্ন করেছি তাতে কোনো প্রার্থী বা ভোটার কেউ বলেনি ইভিএম ভুল করেছে। এর বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ নেই। ব্যালটে কিন্তু একজন অনেক ভোট দিতে পারেন। ব্যালট বাক্স লুট হলে সব লুট হয়ে যায়। ইভিএমে কিন্তু তা করা সম্ভব নয়।