খুলনা জেলা শহর থেকে ১১০ কিলোমিটার দুরে কয়রা উপজেলার অবস্থান। উপজেলাটি সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। সুন্দরবন তীরবর্তী কপোতাক্ষ, শাকবাড়ীয়া ও কয়রা নদী বেষ্টিত উপজেলায় প্রায় তিন লক্ষ মানুষের বসবাস। এই তিন লক্ষ মানুষের চিকিৎসা প্রদানের একমাত্র ভরসার স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জন্মলগ্ন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের কারণে এ এলাকার মানুষ সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬৪ সালে ৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ৩১ শয্যা নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১১ সালে ১৯ শয্যা বৃদ্ধি করে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ২৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন ৮ জন। এর মধ্য ২ জন প্রেষণে আর ১ জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। বাকী ৫ জনের মধ্য জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী পদে পদায়ন থাকলে তিনি সপ্তাহে ১ দিন অফিস করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়ার কনসালটেন্ট এ্যানেসথেশিয়া, মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার (আর্য়ুবেদিক) দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালটিতে গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সপ্তাহে ১ দিন অফিস করায় গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে সার্জারী, মেডিসিন, শিশু,ইএনটি, অর্থোপেডিক, কার্ডিওলজি, চক্ষ, চর্ম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জন, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিষ্ট, এনেসথেটিষ্ট, ডেন্টাল সার্জন পদটি খালি। শিশু ও কার্ডিওলজির পদটি হাসপাতালের জন্মলগ্ন থেকে খালি বলে জানা গেছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাবরেটরি, ডেন্টাল, ফিজিও, কার্ডিওগ্রাফার পদ গুলোও খালি। সুইপার পদে ৫ জনের স্থলে ২ জন থাকলেও একজন অসুস্থ বলে জানা গেছে। এছাড়ও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য ৩টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইভার রয়েছে ১ জন। বাকী ২ টি আ্যাম্বুলেন্স পড়ে রয়েছে। হাসপাতালটিতে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও এটি নষ্ট অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এক্সরে মেশিন থাকলেও যথ উপযুক্ত জায়গা না থাকায় বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরে দেখা গেছে,বহিঃবিভাগ, আন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডাঃ রাকিব হাছান, আশিকুর রহমান, হিরোনময় ঢালী, কুশাল রায়কে ঘুরে ফিরে তিন বিভাগে সেবা দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুজত কুমার বৈদ্য সব সময় মানুষের সেবার কাজে জড়িত রয়েছে। আন্তঃবিভাগে ৫৩ জন রোগী ভর্তি আছে। জরুরী বিভাগে ২০ জন ও বহিঃবিভাগে ২০০ জনকে সারিবদ্ধ হয়ে সেবা নেওয়ার আপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পুরনো ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় ভবন ভেঙে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণাধীন। ডাক্তারদের আবাসিক ভবনও খুবই নাজক। ছাদের প্লাস্টার খসে পড়তে শুরু করেছে। আবাসিক ভবনগুলো মেরামত কিংবা নতুন ভবন তৈরি করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। কয়রা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. কোমলেশ কুমার সানা বলেন,কয়রা উপজেলা সহ এর পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা, দাকোপ উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, শ্যামনগর উপজেলার মানুষ এখানে চিকিৎসা নেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে গুরুতর রোগীদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় জরুরী বিভাগে আগত গুরুতর রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ১১০ কিলোমিটার দূরত্বে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অবস্থান এবং বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা কারণে গুরুতর রোগী এবং তাদের স্বজনদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়নের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়ত তাগিদ দিয়ে আসছি। পুরাতন ভবনটির স্থলে নতুন ভবন নির্মান হওয়ায় ১৯ বেডের ভবনে ৫০ বেডের সেবা দেওয়া হচ্ছে। জরুরী, আন্তঃবিভাগে তিন শিফটে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কমপক্ষে ১২ জন আর বহিঃবিভাগেও ৪ জন চিকিৎসক দরকার। শত সংকটের মধ্যও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। জনবল সংকটের বিষয়টিও যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবহিত আছেন। বহিঃর্বিভাগে এবং ভর্তিকৃত রোগীদের প্রাপ্যতা অনুসারে আমরা প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ওষুধ সরবরাহ করে থাকি। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের নানা বিষয়ে সমস্যার বিষয়টি তাদের উধর্তন কর্তৃপক্ষে অবহিত করা হয়েছে।