সীমান্তের গ্রামগুলোতে ফের বন্যহাতির উৎপাত শুরু হয়েছে। ভারত থেকে সীমান্ত পেড়িয়ে ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ও ফারুংপাড়া গ্রামে অবস্থান নিয়েছে। হাতির পাল গ্রামে প্রবেশে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সীমান্ত এলাকার মানুষ। সীমান্তে এ সমস্যাটি নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরে মানুষ ও হাতি একে অপরকে তাড়া করে বছরের পর বছর পার করলেও সমস্যাটির স্থানীয় সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি কেউ। হাতির হাত থেকে ক্ষেতের ধানসহ বিভিন্ন ফসল রক্ষা করতে এসব গ্রামের লোকজন হতাহতের শিকার হচ্ছেন। গত ১ মাস আগেও ভারতীয় হাতি দলবেঁধে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে ফসল ও ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ঐ সময় হাতি তাড়াতে গিয়ে সাহেব আলী(৪৫) এক কৃষক আহত হয়েছে। তার ৫ মাস আগেও হাতির আক্রমণে বুনেশ চিসিম (৬৫) এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে ও আহত হয়েছিল আরও দুই জন।
এদিকে আবারও দুইদিন ধরে বন্যহাতির পাল বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। বন বিভাগ বলছে- ধান,কাঁঠাল,কলা গাছ ইত্যাদি খাওয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় হাতির পাল।
দুর্গাপুর উপজেলাটি ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা। উপজেলাটির সদর ইউনিয়ন ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই সীমান্তের কাছাকাছি। কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে বন্য হাতির পাল সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। ফলে হাতির কারণে আতঙ্কে ও বেকায়দায় পড়েছেন সীমান্ত এলাকার হাজার-হাজার মানুষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,ধান মৌসুম শুরু হয় তখন সীমান্তে আসে হাতির পাল। প্রতি পালে ৪০ থেকে ৫০টি হাতি একবারে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে। হাতির তা-ব থেকে নিজেদের রক্ষায় গ্রামের মানুষ ফটকা ফাটানো,মশাল,বাঁশি ও টর্চ লাইটের আলো জে¦লে শব্দ করে তাড়ানো চেষ্টা চালাই। চলতি বছর বেড়েছে বন্য হাতির উৎপাত। গ্রামের যুবক ও বড়রা মিলে পাহারা দিচ্ছেন দিনে ও রাতে।
স্থানীয় কৃষক সবুজ মিয়া,সুবান মিয়া,কাসেম আলী,হযরত মিয়া,শাহিদ মিয়া জানান,গত কয়েক বছর ধরেই হাতিগুলো ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশে নেমে আসে। হাতির তা-বে আমরা রীতিমতো অতিষ্ঠ। ক্ষুধার্ত হাতির পাল খাবারের খোঁজে সীমান্ত পার হয়ে আমরার ফসল ও বাড়িঘর ভাঙে। মানুষের উপর আক্রমণও করেছে কয়েক বার এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আবারও কখন কার ক্ষতি করে,আমরা হাতির আতঙ্কে আছি।
দুর্গাপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী বলেন,হাতির তা-ব থেকে রক্ষা পেতে বাড়ির পাশে কাঁটা জাতীয় গাছ লাগাতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। হাতির তা-বে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হবে।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভার:) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন,সীমান্তে মাঝে মধ্যে হাতির উপদ্রব বেড়ে যায়। ক্ষুধার্ত হাতির পাল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসে। তবে হাতির তা-ব থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বন্য হাতির দারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা করে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।