তখনকার দিনে গ্রাম সালিশ আর বড়কোন জমায়েত হলে পাশে দেখা যেত হুক্কা। আর সেই হুক্কা আজ প্রায়ই বিলুপ্তির পথে।
বিগত তিন বা চারের দশকে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ভাত খেতেন বা না খেতেন, কিন্তু হুক্কায় টান না দিলে যেন মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে যেত। আবার তৎকালিন সময়ের উচ্চ বিলাশী মাতব্বররা বৈঠক খানার চেয়ারে পিট ঠেকিয়ে লড ষ্টাইলে হুক্কার নলে মুখ বসিয়ে গুড়গুড় করে টান মারতেন। এই টানের বিশেষ একটি নাম শোনা যেত, যাকে বলা হয় সুখ টান।
আর এই সুখ টানের সময়টিতে নাক-মুখ থেকে প্রচুর ধোয়া বের হতো। আবার ওই ধোয়া গিলে খেতেন তারা, চোখে-মুখে একটা নেশা নেশা ভাব ফুটে উঠতো। একজন সুখ টান দিয়ে অপরের হাতে দিতেন। এভাবে পালাক্রমে টান চলছে আর চলছে। এদৃশ্যপানে কৌতূহল মানুষের অনেকে অপলক তাকিয়ে থাকতেন। সেই হুক্কা পাগল এক সাধুকে খুঁজে পাওয়া গেল বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খাশেরহাট বাজারে।
নাম তার পাভেল পাগল। তিনি একজন চায়ের দোকান দার। ওড়াকান্দি হরিগুরু চাঁদ ঠাকুরের ভক্ত তিনি। এবং মতুয়া ধর্মাবলম্বী বলে জানান। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পাশের একটি ঝুপড়ী ঘরেই তাদের বসবাস। বুধবার দুপুরে পাবেল তার দোকানের পাশে বসে হুক্কায় টান মারতেই এপ্রতিবেদকের ক্যামেরায় বন্ধিহয় দৃশ্যটি। অড্ডা হয়, কথা হয় খোলা মেলা। তিনি জানান, হুক্কা বাবা-ঠাকুর দা’ পান করছেন। আমিও সেই প্রথা ধরে রেখেছি। হুক্কার তামাকে ক্ষতিকর নিকোটিন এর সংখ্যা কম থাকে। পানিতে ধুয়া ফিল্টার হয়ে যায়। বিড়ি, সিগারেটসহ অন্যান্য নেশা জাতীয় জিনিসের মত মারত্মক ক্ষতি করেনা। আর হুক্কার পানি দিয়ে চোক ধুলে চোখের ছানি পড়া নিরাসন হয়। তামাক কেটে চিটাগুড় মাখিয়ে হুক্কার তামাক প্রস্তুত করতে হয়। সাথে একটু খেজুরেরগুল দিলে বেশী সাধ লাগে। অবশেষে হরি নামের একটি ভক্তি মূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন পাভেল পাগল।