সময়ের আগেই জমে উঠেছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনী পরিবেশ। কৌশলে ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন দলের মনোনীত ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা। উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছেন কম বেশি সকল মেয়র প্রার্থী।
সূত্রমতে, বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সময়ে সরকারি কোন বরাদ্দ না আসায় উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে গেছে নগরবাসী। তাই আসন্ন সিটি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত নৌকার প্রার্থী হওয়ায় তার বিজয়ের আশা নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন সচেতন নগরবাসী।
তবে এখনও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দরা নির্বাচনী মাঠে না নামলেও বরিশাল সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নতুন মুখ নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত ও তার সহধর্মিনী লুনা আব্দুল্লাহর কৌঁসুলি প্রচারণা সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। পাশাপাশি পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস এবং ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। অপরদিকে নিরব ভূমিকায় নির্বাচনী শেষ লড়াইয়ে থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশাল নগরীর উন্নয়নের আশায় তাকিয়ে থাকা মানুষগুলো এখন সম্ভ্রাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্য থেকে কার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হবে। আর কোন প্রার্থী সরাসরি সরকার প্রধানের কাছ থেকে উন্নয়ন প্রকল্প আনতে পারবেন সেই হিসেব নিকেশ করতে শুরু করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে মহানগর জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতৃবৃন্দরা মতবিনিময় সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। একইভাবে নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরাও খোকন সেরনিয়াবাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছেন।
পাশাপাশি মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করে কৌশলে নির্বাচন কমিশনকে এরিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা যে যার মতো করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন নানাবিধ প্রতিশ্রুতি, বলছেন উন্নয়নের সর্বোচ্চ শহর হবে বরিশাল নগরী।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশাল নগরীতে সবধরনের উন্নয়ন সাধন করে দেশের মধ্যে প্রথম স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বরিশালে পাঠিয়েছেন। নগরবাসী আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে আমাকে নির্বাচিত করলে আমি নগরীর মানুষ যেসব সেবা থেকে বঞ্চিত আমি সেইসব সেবা দিবো। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় অল্পসময়ের মধ্যে উন্নয়নের মাধ্যমে বরিশালকে তিলোত্তমা স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়তে তুলবো। নগরবাসীর জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
খোকন সেরনিয়াবাত আরও বলেন, আমাকে মেয়র নির্বাচিত করা হলে নগরবাসীর সমন্ময়ে প্রথমে আমি নগর পরিকল্পনা কমিটি গঠণ করে বরিশালকে একটি আদর্শ শিক্ষা পর্যটন এবং গ্রীন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবো। পরবর্তীতে নগর পরিবেশ ও সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার ও পরিসেবার কাজ করবো। যারমধ্যে থাকবে প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ের কাউন্সিলরদের পর্যাপ্ত সহায়তা ও ক্ষমতায়ন করা। ওয়ার্ড পর্যায়ে বিশেষ সেবা ও পরিসেবার ব্যবস্থা করা, যাতে করে স্থানীয়দের সিটি ভবনমূখী হতে না হয়। এ ছাড়া নাগরিক নিরাপত্তা ও পর্যটনে শিশু-যুবকদের খেলাধুলা ও বিনোদনে ওয়ার্ড পর্যায়ে ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করবো। নগরীর ঐতিহাসিক মর্যাদা ও সুরক্ষা করাসহ স্মার্ট বরিশাল নগরী গড়তে নগর পরিকল্পনা কমিটির মাধ্যমে নগর বাজেটকে গণমূখী করে ওয়ার্ড পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় উন্নয়ন বরাদ্দ রাখবো।
জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল মার্কার মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে বরিশালকে একটি বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, আমি এতোটুকু বুঝি যে মানুষ আস্থার স্থান পেয়েছে। নগরবাসী জানেন আর যাই হোক সরকারি বরাদ্দ চুরি হবেনা। তাই আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করা হলে বিগতদিনের চেয়ে বরিশাল নগরীতে সবচেয়ে বেশি উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা করবো। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপন বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ বরিশালে বিএনপির ভোট বেশি। তাই যখন দলের মনোনীত প্রার্থী নেই, তখন বিএনপির ভোট আমি পাবো। আর আমি নির্বাচিত হতে পারলে নগরবাসীর চাহিদাকে গুরুত্বদিয়ে সবধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করবো।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ঘোষণা ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত শনিবার দিবাগত রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে জরুরি ঘোষণা দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন আচারণ বিধি মেনে ও চলে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বদ্ধ পরিকর। তাই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা ও প্রচারণার সাথে যারা জড়িত রয়েছেন, তারাসহ দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কমিশন থেকে প্রতীক না পাওয়া পর্যন্ত কোনরূপ প্রচারপত্র বিলি, মিছিল, সভা-সমাবেশ, প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে এবং প্রতীক ব্যবহার করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে সমর্থন দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের নেতৃবৃন্দরা। নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দরা সমর্থনের কথা প্রকাশ করেন। এর আগে সংগঠনের সভাপতি পলাশ চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দরা নৌকার প্রার্থীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পরে মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দরা আগামী ১২জুন সিটি নির্বাচনে সকলকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে উন্নয়নের প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।