অবশেষে অপহরণের মাত্র ৮ ঘণ্টার মাথায় ৭ মাস বয়সী শিশুটিকে উদ্ধার করেছে হোমনা থানা পুলিশ। শনিবার বেলা বারোটার দিকে কুমিল্লার হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শিশু মোহাম্মদ নিহাদকে নিয়ে পালিয়ে যান প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া মাহমুদা। একইদিন রাত আটটায় হোমনা থানা পুলিশ চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা পুলিশের সহায়তায় অপহৃত শিশু মোহাম্মদ নিহাদকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী মাহমুদাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
এ ঘটনায় মা শিউলী বেগম বাদী হয়ে হোমনা থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছেন। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণের জন্য আসামীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিশুটিকে উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে রোববার বেলা একটায় হোমনা থানায় সাংবাদিকদের প্রেসব্রিফিং করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম।
প্রেসব্রিফিংয়ে হোমনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিউলী বেগমের শিশু সন্তান মোহাম্মদ নিহাদের অপহরণের বিষয়টি মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৮ ঘণ্টার মাথায় চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা পুলিশের সহায়তায় কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৭ মাসের শিশু নিহাদকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী মাহমুদা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছি। আসামি মাহমুদার বিরুদ্ধে হোমনা থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, ‘কী উদ্দেশ্যে শিশুটিকে অপহরণ করেছে তার সদুত্তর পাইনি। আটক মাহমুদা কেগমের বরাত দিয়ে বলেন, আসামীর দুটি সন্তার থাকলেও তারা তার কাছে নেই। সেই শুন্যতা থেকেই এবং লালন পালন করার উদ্দেশ্যেই কৌশলে শিশুটিকে অপহরণ করেন। এটি বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই। আসল রহস্য উদ্ধারে আমরা কাজ করছি।’
মা শিউলী বেগম তার সন্তানকে ফিরে পেয়ে আমাদের সময়কে বলেন, ’প্রথমেই আমি মহান আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া জানাই। সন্তানকে ফিরে পেতে পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও তিনি ধন্যবাদ জানান। এর আগে শিশুটি উদ্ধারে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য পুলিশের উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি স্থানীয় সাংবাদিক ও ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে ফেইসবুকে বেশ সাড়া পড়ে। ফলে মাত্র ৮ ঘণ্টার মাথায় অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী ওই নারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
উল্লেখ্য, গতকাল সকালে নিজের ঠা-াজনিত সমস্যায় চিকিৎসা নিতে শনিবার সকাল নয়টায় শিশুপুত্র মোহাম¥দ নিহাদকে (৭ মাস) কোলে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে নিয়েছিলেন মাহমুদা নামের (৩২) পূর্ব পরিচিত প্রতিবেশী ওই ভাড়াটে নারীকেও। যথারীতি ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে পুনরায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। রোগীর ভীড় থাকায় শিশুপুত্রকে নিয়ে ওই চিকিৎসকের কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছিলেন শিউলী আক্তার এবং মাহমুদা। বেলা বারোটার দিকে শিশুপুত্র মোহাম্মদ নিহাদকে কৌশলে মাহমুদা কোলে তুলে নেন। এদিকে শিউলী বেগমকে ডাক্তারের কক্ষের ভেতরে যাওয়ার কথা বলে এক পা দু’পা করে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন তিনি। শিউলী বেগম কিছুক্ষণ পরে দেখেন তার পুত্র এবং মাহমুদা আশপাশে কোথাও নেই।
সন্তানকে না পেয়ে পাগলের মতো ছুটাছুটি করেছেন হাসপাতালের এ গলি ওই গলি। তার আহাজারীতে হাসপাতালের অন্য রোগীরাও ভারাক্রান্ত ছিল। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানান। সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বিষয়টি থানাকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রিপন বালা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে (হাসপাতালে) গিয়ে পুত্রহারা শিউলী আক্তার ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।
মা শিউলী আক্তারের বাবার বাড়ি হোমনা উপজেলার আলীপুর এবং স্বামীর বাড়ি একই উপজেলার রামকৃষ্ণপুর আখন্দপাড়া গ্রামে। এক ছেলে (১০) ও এক মেয়েকে (৯) নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভাড়া থাকেন রামকৃষ্ণপুর আখন্দপাড়ার প্রতিবেশী শাহিনূর মিয়ার বাড়িতে। মাহমুদার মা রামকৃষ্ণপুর কলেজের ছাত্রাবাসে ঝি এর কাজ করেন বলে জানা যায়। পূর্ব পরিচিত হওয়ার সুবাদেই মাহমুদাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন তিনি।