আওয়ামী লীগ মনোনীত বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে নৌকার মার্কার মেয়র প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করা হলে একটি নতুন বরিশাল গড়ার স্বপ্ন রয়েছে। যেখানে পুরো নগরীকে একটি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি নাগরিক সবধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। আমার দরজা পুরো নগরবাসীর জন্য সর্বদা খোলা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বরিশাল নগরবাসীর সেবা করার জন্য সুযোগ দিয়েছেন, তখন সবাইকে বুঝতে হবে আসন্ন সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিজয় মানেই শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করা হলে বরিশাল নগরবাসীকে আর উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকতে হবেনা। এখন নগরবাসী কি উন্নয়নের পক্ষে থাকবেন, নাকি এ অন্ধকারের মধ্যেই থাকবেন, তা তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বরিশাল নগরীর সার্বজনীন নাগরিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে মঙ্গলবার রাতে প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার শুরুতে নৌকার মেয়র প্রার্থীকে পরিষদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় মেয়র প্রার্থীর সহধর্মিনী লুনা আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় পরিষদের আহ্বায়ক হালিমুজ্জামান খান মাহামুদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সদস্য সচিব আবদুল আজিজ হাওলাদার, নির্বাচনী উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আনু, আলহাজ আবদুস সালাম, ইব্রাহীম খলিল, ডা. একেএম কবিউল করিম, মরিয়ম বেগম, সিএইচ, মাহবুব, মোয়াজ্জেম হোসেন লিটন, মোস্তাফিজুর রহমান বাদশা প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে হালিমুজ্জামান খান মাহামুদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বরিশাল নগরীর উন্নয়ন স্থবির হয়ে গিয়েছিল। জনগন নাগরিক সুবিধা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগরবাসীর দুর্দশার কথা চিন্তা করে একজন সৎ, নির্ভিক ও জনদরদী মানুষ হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাই আমরা সার্বজনীন নাগরিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে নৌকার প্রার্থীকে স্বতঃর্স্ফূত সমর্থন দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর দুর্দশা পুরোপুরি লাঘব হয়ে একটি স্মার্ট উন্নত বরিশাল নগরী হবে। তাই আমরা সবাই তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার অঙ্গিকার করেছি।
অপরদিকে বুধবার বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানঅতিথির বক্তব্যে নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, বাংলাদেশ আজ এ পর্যন্ত এগিয়েছে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আমাদের নতুন বরিশাল গড়ার শপথ নিতে হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে কোন দ্বন্ধ-সংঘাত করবো না। হিংসা করবো না, সেই শপথ আজ প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাববর্তন দিবসে করতে চাই।
মহানগর যুবলীগের আয়োজনে নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজামের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, অ্যাডভোকেট কেবিএস আহমেদ কবির, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, অ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন শহীদ, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদার, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ান, বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মঈন তুষার প্রমুখ।
পরবর্তীতে দুপুরে নৌকার মেয়র প্রার্থী বিএম কলেজ, সিটি কলেজ ও অমৃত লাল দে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। একইদিন বিকেল পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও দলীয় নেতাকর্মীরা মেয়র প্রার্থীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। রাত আটটায় নির্বাচর্নী কার্যালয়ে মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল শাখার নেতৃবৃন্দরা।
তিন সাংবাদিকের মনোনয়ন জমা ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে একজন ও কাউন্সিলর পদে দুইজনসহ তিন সাংবাদিক প্রতিদ্বন্ধীতা করার জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ওই তিনজন প্রার্থীরা হলেন, মেয়র পদে মো. আসাদুজ্জামান আসাদ (স্বতন্ত্র), ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে এম সালাউদ্দিন এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে রেদোয়ান রানা।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দ্বারা জনগণের ওপরে অত্যাচার চালায়। বরিশাল শহরের সাধারণ জনগণ একধরনের অঘোষিত কারাগারে বসবাস করছেন। এর থেকে মুক্তি পেতে মানুষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমাকে ভোট দেবেন। নগরবাসীর আশ্বাস পেয়েই আমি নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। কাউন্সিলর প্রার্থী রেদোয়ান রানা বলেন, ওয়ার্ডবাসীর সুখে-দুঃখে সবসময় আমি পাশে ছিলাম, আছি ও থাকবো। তাই ওয়ার্ডবাসীর অনুরোধে আমি প্রার্থী হয়েছি। প্রায় একই কথা বলেছেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাংবাদিক এম সালাউদ্দিন।
রিটার্নিং অফিসার হুমায়ূন কবির বলেন, ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৬ মে মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমাদানের শেষ দিনে মেয়র পদে ১০ জন, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৪৬ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। যাদের ফরমগুলোর যাচাই-বাছাই করা হবে ১৮ মে, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন ২৫ মে, প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৬ মে ও আগামী ১২ জুন কাঙ্খিত এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।
প্রার্থীর প্রস্তাবকারীর মৃত্যু ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে বাসায় ফিরে বুকে ব্যাথা অনুভব করেন প্রস্তাবকারী। তাৎক্ষনিক তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মৃত্যুবরন করেন নগরীর চৈতন্য স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষিরোধ মুখার্জী লেনের বাসিন্দা প্রস্তাবকারী এমএ জলিল (৭০)। তিনি (জলিল) ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জাবের আব্দুল্লাহ সাদির প্রস্তাবকারী ছিলেন। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জাবের আব্দুল্লাহ সাদি।
কারাগারে থেকেও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমা ॥ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের পিটিয়ে ও হত্যার হুমকি দিয়ে কারাগারে রয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত হওয়া মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না। তবে তিনিও সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র ক্রয় ও জমাদানের শেষদিনে কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রইজ আহম্মেদ মান্না নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। ওই ওয়ার্ডে আরও সাতজন প্রার্থী রয়েছেন।