আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ লক্ষ্যে দলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অন্যতম সদস্য ও মেয়র প্রার্থীর বড় ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপিকে প্রধান করে নয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় টিম গঠণ করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ ও বড়ধরনের সংঘাতের আশঙ্কার অবসানের ইঙ্গিত মিলেছে।
কেন্দ্রীয় টিমে আবুল হাসানাত আব্দুুল্লাহকে প্রধান করা হয়েছে। টিমের সমন্বয়ক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও যুগ্ম সমন্বয়ক আফজাল হোসেন। সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান ও গোলাম কবির রাব্বানী চিনুকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে সুবাতাস ॥ মেয়র পদে মনোনয়ন, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের (সদ্য সাবেক) আহবায়ককে গ্রেপ্তারসহ বেশকিছু ইস্যুতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে আসছিল। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেই অস্থিরতা কাটতে শুরু করেছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পর বরিশাল নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের অফিসগুলো খুলতে শুরু করেছে। নৌকার প্রার্থীর জন্য ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা এখন থেকে কাজ করবেন বলে জানা গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় ওয়ার্ডে বন্ধ থাকা অফিসগুলো খুলছে। সেখানে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ হবে। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েেেনৗকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিচ উদ্দিন সহিদ ও কাজী মফিজুল ইসলাম বলেন, এটি সত্যি হলে অবশ্যই স্বস্তিদায়ক।
সূত্রমতে, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রায় শতভাগ নিশ্চিত থেকেও মনোনয়ন বঞ্চিত হন বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তাকে মনোনয়ন না দিয়ে তার একমাত্র চাচা প্রধানমন্ত্রীর ফুফাত ভাই খোকন সেরনিয়াবাতেেক মনোনয়ন দেয়া হয়। এরপর থেকে বরিশাল আওয়ামী লীগে কোন্দল দেখা দেয়। দীর্ঘ পাঁচবছর যারা দলে কোণঠাসা ছিলেন তারা নতুন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামেন। এতে সাদিক সমর্থিতরা তীব্র বিরোধিতা করে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেন। এতে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ চরম নাখোশ হন। অবস্থা বেগতিক দেখে ঢাকায় বসে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ভিডিও কনফারেন্সে নৌকার পক্ষে সবাইকে মাঠে নামার আহবান জানালেও কোন কাজ হয়নি। সাদিকের আস্থাভাজন মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক (সদ্য সাবেক) রইজ আহমেদ মান্না ও তার সহযোগীদের হামলায় নৌকার প্রার্থীর কয়েকজন সমর্থক আহত হওয়ার পর উত্তেজনা চরমে উঠে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর র্যাব ও পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন মান্নাসহ ১৩ জন। কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত করা হয় মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি। এরপরই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে শুরু করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
চারজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ॥ মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ছয়জনের মনোনয়ন বৈধ ও চারজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে নগরীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, যাচাই-বাছাইয়ে চারজন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মনোনয়ন বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টি মনোনীত ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মুফতী সৈয়দ মোহাম্মাদ ফয়জুল করিম, জাকের পার্টি মনোনীত মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন ও আলী হোসেন। মনোনয়ন বাতিল হওয়া চারজন মেয়র প্রার্থীরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তারা হলেন লুৎফুল কবির, সৈয়দ এসাহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের, মো. আসাদুজ্জামান এবং নেছার উদ্দিন।
উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেব ॥ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ পাশে থাকলে আমার মেয়র নির্বাচিত হবার পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে এই বরিশালের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেব। বরিশালের আবদুর গফুর সড়কের খান বাড়ির আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় কথাগুলো বলেছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বরিশালবাসীর ভাগোন্নয়নের জন্য পাঠিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমি বরিশালের বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছি। মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীকে সাথে নিয়ে পর্যায়ক্রমে সকল সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। শহীদুল ইসলাম শহীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, খোকন সেরনিয়াবাতের সহধর্মিণী লুনা আব্দুল্লাহ, আওয়ামী লীগের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নৌকা প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাজাহান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন প্রমুখ। সভায় সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের হেনস্থা ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে সদর উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা শেষে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা ও ঠেলাঠেলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার ছবি ধারণ করতে গিয়ে তোপের মুখে পরতে হয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন ও পত্রিকার ফটো সাংবাদিকদের। ওইসময় প্রায় ২০জন সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান মামুনের বাসভবনে। মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান মামুন বলেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। পরে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
রাত জেগে ভোট কেন্দ্র পাহাড়া দিতে হবে ॥ রাত জেগে ভোট কেন্দ্র পাহাড়া দিয়ে নিজের ভোট নিজে দিবেন, কাউকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যারা ভোটকেন্দ্র দখল করতে যাবে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। কথাগুলো বলেছেন, জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। বুধবার রাতে নগরীর দক্ষিণ সাগরদী ফরিকবাড়ি স্কুল সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ভোটারদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি আরও বলেন, এই সরকারের মেয়াদ আছে আর মাত্র ছয় মাস। তারা যদি ভোট চাইতে এসে আগামী পাঁচ বছর উন্নয়ন করার কথা বলে তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন বিগত পাঁচ বছরে আপনারা কোথায় ছিলেন। আপনাদের আগামী দিনের মেয়াদ ছয় মাস আছে, পাঁচ বছরের কথা কিভাবে বলেন?
বরিশাল বিএডিসির আয়োজনে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএডিসির সভাপতি আনোয়ার হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির মহানগর আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, রফিকুল ইসলাম গফুর, কামরুজ্জামান কামাল চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, সোহেল মৃধা প্রমুখ।