বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত সফর করে সবকিছুর বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য ধরনা দিয়ে কোথাও পাত্তা পাঁচ্ছেন না। গোটা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয়াবহ আওয়ামী লীগ তা-ব আর তামাশা ও ভাঁওতাবাজির নাটক শুরু করেছে। পত্র-পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা গুজব ছড়িয়ে গণমানুষকে বিভ্রান্ত করতে মাঠে নামানো হয়েছে সরকারের ‘পেইড বাহিনী’। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নিশ্চিত পতনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা নিশিরাতের সরকারের ভিত্তিমূল হচ্ছে এখন দলীয় গুণ্ডাবাহিনী, দলানুগত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর অপপ্রচার ও উদ্ভট চাপাবাজি। ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশ থেকে ‘লালকার্ড’ পাওয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে দুর্বার গণআন্দোলনে উত্তাল রাজপথ আর বিদেশে রেড সিগন্যালের এই পরিস্থিতিতে ভোট ডাকাত সরকার পুরোপুরি বেপরোয়া-উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। বন্দুকের নলের শাসন শুরু করেছে। সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুণ্ডাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে মরিয়া আক্রমণ চালাচ্ছে। কেবল গায়েবি মামলা, হয়রানি-হামলা-মারধর-ভাঙচুর-লুটপাটই নয়, এমনকি কুপিয়ে ও গুলিবর্ষণ করেও হত্যা ও পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে দেশের মানুষকে। মিছিল দেখলেই আতঙ্কে গুলি চালানো হচ্ছে নির্বিচারে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিএনপির ওই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের এক আলোচিত নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গত সোমবার মানববন্ধন করে প্রস্তাব দিয়েছেন নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান সংসদ ও আওয়ামী সরকারের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়াতে হবে। তার এই প্রস্তাবের পক্ষে সরকার দলের নেতারা সমর্থন দিচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি শেখ হাসিনার চিরকালীন বিরক্তি ও বিতৃষ্ণা। এজন্য এখন ভোট পণ্ড করার নীলনকশা বাস্তবায়নের চক্রান্ত শুরু করেছেন তিনি। রিজভী বলেন, বিনাভোটে সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে র্যাব-পুলিশকে দিয়ে বিরোধীদল ও মতের হাজার হাজার মানুষকে গুম খুন অপহরণ করেছে। আওয়ামী লীগের মুখের সন্ত্রাস থেকেও মানুষ রক্ষা পায়নি। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কখনো পরোক্ষভাবে, কখনো সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। গত বছরের ১৮ মে এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দিয়ে হত্যা করার হুমকি দেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে পদ্মা সেতু থেকে পানিতে ফেলে চুবিয়ে মারারও হুমকি দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, দেশের জনগণ ভুলে যায়নি, ‘একটার বদলে দশটা লাশ’ ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর সারা দেশের আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লগি বৈঠাসহ রাজধানীতে জড়ো করেছিলেন শেখ হাসিনা। সাবেক ছাত্রদল নেতা বলেন, ইতিহাস সাক্ষী, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সব সন্ত্রাসের উস্কানিদাতা, হুকুমদাতা। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দিয়ে কি বলেছিলেন সেটি আমি বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চাই। তাহলে দেখা যাবে আওয়ামী নেতাদের সন্ত্রাসী চরিত্র পাল্টায়নি। উগ্রতা, নির্মমতা, অসূয়া ও হিংস্রতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভূষণ। ‘আমাদের এক দফা শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে’ রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের এমন বক্তব্যকে ‘স্লিপ অব টাং’ বলে আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়কের বক্তব্য একটি ‘স্লিপ অব টাং’। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। রিজভী বলেন, পত্রিকায় দেখলাম চট্টগ্রামে গত সোমবার প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে নিয়ে মিছিল করেছেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বিনা-ভোটের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। জঙ্গি কায়দায় প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিলের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হতে চললেও এখনো ‘পিস্তল মোস্তাফিজকে’ গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা পর্যন্ত হয়নি। এটি একটি ভয়ঙ্কর আলামত। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এখন রাজনীতির ভাষা ত্যাগ করে সন্ত্রাসীদের ভাষায় কথা বলছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জনাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত। ঘুমের মধ্যেও জনতার পদধ্বনিতে আঁতকে উঠছেন তারা। কারণ জবরদস্তি করে বেশীদিন ক্ষমতা দখল করে থাকা যায় না। সবকিছুর শেষ আছে। রিজভী বলেন, জনগণকে ধোঁকা দিয়ে আর বোকা বানানো যাবে না। শিগগির জনগণের দাবি না মানলে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, গণতন্ত্রকামী জনগণই এবার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী রাজনীতি সমাধিস্থ করবে। সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা, মহানগর, গাইবান্ধা, নওগা, কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার আহত হামলার শিকার দলীয় নেতাকর্মীর তালিকা প্রকাশ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কোভিদ খোকন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আমিনুল ইসলাম ও তারিকুল আলম তেনজিং।