জাল সনদের অভিযোগে অপসারিত আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়ার অপতৎপরতা বন্ধ ও বেতন ভাতার দাবীতে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রীদের মানববন্ধনে ফোরকানের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। হামলায় কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ের জেষ্ঠ্য প্রভাষক জয়নুল আবেদীনসহ চার শিক্ষক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত জয়নুল আবেদীনকে শিক্ষকরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ঘটনার সাথে জড়িত বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় থানায় মেহেদীকে প্রধান আসামি করে ছয় জনের নামে মামলা হয়েছে।বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় বকুলনেছা মহিলা কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানাগেছে, ফোরকান মিয়া ১৯৯৯ সালে বিএ (পাস) জাল সনদ দিয়ে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে ইসলামি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকুরি নেন। ২০১০ সালে তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ হন। অধ্যক্ষ হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারীর অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সাময়িক বরখাস্তের পর তাঁর ডিগ্রি পাসের জাল সনদের তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে তিনি স্বেচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত ৮ বছর ফোরকান কলেজে দায়িত্ব থেকে দুরে ছিলেন। ২০২১ সালের ১২ জুলাই মোঃ ফোরকান মিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে আসিন হন। ওই বছর ২৬ নভেম্বর কলেজের এডহক কমিটি ও পরে গভর্ণিং বডি তাকে পুনরায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। মহামান্য হাইকোর্ট এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তার পুর্নবহালের আবেদন খারিজ করে দিলেও তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জবর দখল করে কলেজের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফোরকানের এমন কর্মকা-ে গত বছর নভেম্বর থেকে এ বছর মে মাস পর্যন্ত ৭ মাস কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় জাল সনদধারী অপসারিত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়ার অপতৎপরতা বন্ধ এবং ও বেতন ভাতার দাবীতে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রীরা মানববন্ধনের আয়োজন করে। ফোরকানের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদী, কলেজের নৈশপ্রহরী বাবুল মিয়া, ফোরকানের ভাই জাকারিয়া ,সহকারী অধ্যাপক মোঃ কবির হোসেন, সহকারী অধ্যাপক মোঃ বাছির উদ্দিন, রসায়ন বিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক মোঃ জলিল ও নজরুল ইসলাম মানববন্ধনে হামলা করে। হামলায় কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ের জেষ্ঠ্য প্রভাষক জয়নুল আবেদীন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের প্রভাষক বশির উদ্দিন, পদার্থ বিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ ও যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক জলিলুর রহমান আহত হয়। গুরুতর আহত জয়নুল আবেদীনকে শিক্ষকরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ কাঙ্খিতা মন্ডল তৃণা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ হামলায় জড়িত বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। এ ঘটনায় ওইদিন দুপুরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী আক্তার বাদী হয়ে মেহেদী, ফোরকান,কবির হোসেন ও জলিলকে আসামি করে ছয় জনের নামে থানায় মামলা করেছে। পুলিশ সন্ত্রাসী মেহেদীকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে অপসারিত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়া বলেন, আমি মারধর করিনি। উল্টো আমাকে লাঞ্ছিত করেছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ কাঙ্খিতা মন্ডল তৃণা বলেন, আহত জয়নুল আবেদীনের মুখমন্ডল, চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহৃ রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মেহেদীকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। বরগুনা পুলিশ সুপার আবদুস সালাম বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।