বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা নগরীর অলিগলি। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি বিজয়ের লক্ষ্যে ভোট ভিক্ষা চাইছেন।
পাশাপাশি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল হিসেবে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা সরব হয়ে উঠেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরেছে বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করা মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার ও নির্বাচনী গান। যা অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী নিজে, আবার কর্মী-সমর্থকরাও পোস্ট করছেন। ক্যাপশনে তারা ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নিজের জন্য জনগণের কাছে দোয়া চাচ্ছেন।
একাধিক প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়েই ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিছু মানুষ আছে এখান থেকেও দেখে প্রার্থীদের ওপর আকৃষ্ট হচ্ছেন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ভোটাররা প্রায় সময়ই ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে সরব থাকেন, যেকারণেই প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনায় এবার নতুনমাত্র যোগ করেছে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো।
নগরীর বাসিন্দা ভোটার ও সাংবাদিক তানভীর আহম্মেদ অভি বলেন, বিষয়টি বেশ সহজলভ্য প্রচারণা। ব্যানার, পোস্টার, মাইকিং করে প্রচারণা চালাতে যে কসরত করতে হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার প্রয়োজন হয়না। তবে এ মাধ্যমে প্রচারণাটা যে নিশ্চিত ভোট এনে দিচ্ছে সেটা এখনও বলার সময় আসেনি। এজন্য প্রার্থীকে স্ব-শরীরে ভোটারদের সাথে দেখা করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও নির্বাচন বিশ্লেষক সোহেল রানা বলেন, ভোটের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময়কাল সীমিত। তাই এই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রার্থীদের প্রত্যেক ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার সম্ভব নয়। যেকারণে প্রার্থীরা প্রযুক্তির ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্যটি বুঝতে পেরে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচারনা চালাচ্ছেন। ভোটাররাও এটিকে গ্রহণ করে নিচ্ছেন। সবাই এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল বুঝতে পারলেই সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনবে। তিনি আরও বলেন, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে প্রযুক্তি হলো সবচেয়ে আধুনিক ও সহজলভ্য মাধ্যম। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর ভূমিকাই মূখ্য। কতটা আন্তরিকতায় তিনি তার উন্নয়ন পরিকল্পনা জনগণকে অবহিত করবেন সেটি একান্তই তার (প্রার্থী) ওপর নির্ভর করে।
সোহেল রানা বলেন, অনেক প্রার্থীকেই দেখেছি প্রচার-প্রচারণায় প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। তবে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারলে সেটি আজকের বাস্তবতায় ভালো ফলাফল বয়ে আনবে। কারণ নির্বাচিত হওয়ার পর বিসিসির প্রত্যেকটি ওয়ার্ডভিত্তিক মাসিক ভার্চুয়াল টাউনহল মিটিং হতে পারে। মেয়রও এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন। সুধী সমাজের সাথে কথা বলে কীভাবে ভার্চুয়াল টাউনহল মিটিং করা যায় সে উদ্যোগ গ্রহণ করার এখনই সময় এসেছে। কারণে উন্নত গণতন্ত্রের দেশে টাউনহল প্রথা বহু আগের। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সেটিকে ভার্চুয়ালি করতে পারি। এতে সময় ও খরচ কম হবে। বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেই এবারের সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রযুক্তির ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রযুক্তি ব্যবহারে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ও তার সমর্থকরা। প্রার্থীর নিজের নামে ও নৌকার সমর্থকগোষ্ঠীসহ একাধিক নামে আইডি খুলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা, মেয়র নির্বাচিত হলে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার কথা ও ভিডিওচিত্র তুলে ধরা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনায় পিছিয়ে নেই হাতপাখার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ও তার সমর্থকরা। মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনায় দেখা মিলছে লাঙল মার্কার মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসসহ অন্যান্য স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের। তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়া থেকে শুরু করে, উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার করে আসছেন। এমনকি প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলেও ভিডিও বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।
মৃত্যুর পরেও অমর হিরন ॥ মাত্র ১৩ দিন পর বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নগরীর প্রতিটি পাড়া ও মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস, আদালতে আলোচনার ঝড় বইছে কে হচ্ছেন নতুন মেয়র। প্রার্থীরা যেমন ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তেমনি প্রার্থী বাছাইয়ে হিসেব মিলাচ্ছেন ভোটাররা। এরই মাঝে ভোটার আর প্রার্থীর আলোচনায় উঠে এসেছে একদশক আগের সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের নাম। অনেক প্রার্থী হিরনের শুন্যতা পূরণ করার আশ্বাস নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। আবার ভোটাররাও চেষ্টা করছেন কে প্রয়াত মেয়র হিরনের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন তার ধারণা নিতে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল, ইসলামি আন্দোলনের শীর্ষ নেতার প্রার্থীতার আলোচনাকে পাশ কাটিয়ে এখন নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেই চলছে শওকত হোসেন হিরনের বন্দনা।
নগরীর ভোটার সাংবাদিক নাজমুল সানী বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স সবই আমরা করপোরেশনকে দিয়ে থাকি। অথচ হিরন সাহেব মারা যাওয়ার পর আমাদের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আহসান হাবিব কামাল, তারপর সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হলেও কেউ নগরবাসীর ভাগ্যের উন্নয়ন করেননি। উল্টো একদিকে যেমন ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অপরদিকে ভবন মালিকরা সবসময় ভবন ভাঙার আতঙ্কে ছিলেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা চরমোনাই হুজুরের দল বুঝিনা। আমরা চাই শওকত হোসন হিরনের মতো যে নগরবাসীকে ভালোবাসবে তাকে নির্বাচিত করতে।
আমতলার মোড় এলাকার বাসিন্দা ও নারী ভোটার ডা. শাহনাজ রুবী বলেন, স্মৃতিবিজরীত হিরন সাহেবের নির্বাচনী অফিসকে আসন্ন সিটি নির্বাচনে নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় বানিয়েছেন। সেখানে বসেই নির্বাচনী সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি শওকত হোসেন হিরন সাহেবের প্রতিটি উন্নয়ন কাজের সাথে তৎকালীন সময় জড়িত নেতৃবৃন্দরা দীর্ঘদিন পর নির্বাচনী মাঠে নেমে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। তাই এবার মনে হয় উন্নয়নবঞ্চিত বরিশাল নগরবাসী আরেকজন হিরনকে পেতে যাচ্ছেন।
শুধু ভোটার নয় শওকত হোসেন হিরনের কথা বলে বা তার সময়ের প্রশংসা করে ভোট চাইছেন প্রার্থীরাও। গত ২৮ মে বিকেলে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি নির্বাচনী উঠান বৈঠকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত সর্বশেষ মেয়রের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, নগরবাসীর সাথে সবচেয়ে বড় জুলুম করা হয়েছে অতিরিক্ত ট্যাক্স ধার্য্য করে। আমি নির্বাচিত হলে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। তিনি আরও বলেন, শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর গত দশ বছরে নগরীতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরিশালের মানুষ সম্মান পায়নি। তাই আমাকে মেয়র নির্বাচিত করা হলে নগরবাসীর সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সেই সাথে শওকত হোসেন হিরনের স্বপ্ন সমৃদ্ধশালী বরিশাল নগরী গড়তে সবার মতামত নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ করা হবে।
একইদিন সন্ধ্যায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল মার্কার মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর বরিশাল নগরী থমকে গেছে। কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যদি আমি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে হিরনের শূন্যস্থান পূরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরন। তার সময়কার পাঁচ বছরে পরিকল্পিত উন্নয়নমূলক কাজ করে তিনি (হিরন) বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হন। দলীয় প্রভাবশালী এক নেতার গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের কাছে শওকত হোসেন পরাজিত হন। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান শওকত হোসেন হিরন।
আমি হিরণ হতে চাই ॥ আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা মার্কাকে সমর্থন জানিয়ে নগরীতে সার্বজনীন নাগরিক ঐক্য পরিষদের নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধণ করা হয়েছে। বরিশালের ইতিহাসে এটাই প্রথম কোন নির্বাচনে নির্দিষ্ট প্রার্থীর জন্য সার্বজনীন নাগরিক ঐক্য পরিষদ নির্বাচনী অফিস করা হয়েছে। নগরীর কালিবাড়ি সড়কে উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌকার মার্কার মেয়র প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বরিশালের নাগরিকদের নানা মৌলিক চাহিদা রয়েছে, তার কিছুই পুরন করতে পারেনি বর্তমান মেয়র। তাই প্রধানমন্ত্রী সেই অপুরনকে পুরন করতে আমাকে বরিশালে পাঠিয়েছেন। আমি সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন হয়ে নগরবাসীর কল্যাণেএকটি নতুন বরিশাল গড়তে চাই। সার্বজনীন নাগরিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক হালিমুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে ও পরিষদের সদস্য সচিব আবদুল আজিজ হাওলাদারের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা সিকদারসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। অপরদিকে সোমবার বেলা এগারোটায় নগরীর চকবাজার ও বাজার রোড এলাকায় নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করেন। একইদিন বিকেল চারটায় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলীতে এবং সন্ধ্যা সাতটায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়ার মরক খোলার পুল এলাকায় নৌকার প্রার্থী উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।
নৌকার পক্ষে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভা ॥ আসন্ন সিটি নির্বাচনে বরিশালে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন সকল বিভেদ ভুলে নৌকার প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় যুবলীগের আয়োজনে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী যুবলীগের জেলা ও মহানগর শাখার প্রতিনিধিবৃন্দের সমন্বয়ে মঙ্গলবার (৩০ মে) বেলা এগারোটায় নগরীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করবেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও নৌকা প্রার্থীর পক্ষে গঠিত কেন্দ্রীয় টিমের সমন্ময়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. গোলাম রাব্বানী চিনু, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
আইটি সিটি গড়ে তোলা হবে ॥ জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল মার্কার মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর ও কশাইখানা এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের বলেন, সরকার একই পানির গ্লাস বদল করেছেন, এরা উন্নয়ন করবে না। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে যুব সমাজের জন্য কাজ করবো। বরিশালকে আইটি সিটি হিসাবে গড়ে তুলবো। আইটির মাধ্যমে বেকার ও যুব সমাজের অনেক কর্মসংস্থান হবে। তিনি আরো বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে জনগণের ঘারের ওপর যে করের বোঝা রয়েছে তা কমাবো। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল উপস্থিত ছিলেন। ইকবাল হোসেন তাপস আরও বলেন, নারীদের যোগ্য সম্মানটুকুও তারা পাচ্ছেন না। কর্মস্থলে থাকা নারীদের সুযোগ-সুবিধা কিছুটা থাকলেও আমাদের মতো নয়। আবার ঘরে থাকা নারী বিশেষ করে মায়েদের কোন বেতন, প্রমোশন ও ছুটি নাই। আমি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে নারীদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে। অন্তত তাদের সু-চিকিৎসা এবং তাদের বাচ্চাদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। এলক্ষ্যে তাদের জন্য নারী স্পেশালাইজড হসপিটাল করতে চাই, যেখানে কোন পুরুষ থাকবেনা। তাপস হাতপাখার প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ধর্ম-ধর্মের জায়গায়, আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। ওনারা ধর্ম এবং রাজনীতি এক জায়গায় করে ফেলেছে। উনি ওয়াজ মাহফিল করেন। হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ সেই ওয়াজ মাহফিল শুনতে যায়। তার অর্থ এই নয় ওনাদের তারা ভোট দিবে।
বিএনপির ভোট চাইছেন রূপন ॥ আগামী ১২ জুন আপনার সবাই আপনাদের প্রিয় প্রতীক টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট দেবেন। আসলে আমি বললে বলতে পারি-‘ধানের শীর্ষে ভোট দিয়েছেন যারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দেবেন তারা। বরিশাল সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রূপন তার নির্বাচনী উঠান বৈঠকে এভাবেই ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী রূপন কি বিএনপির অঘোষিত প্রার্থী ? বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে রূপন। এবারের বিসিসি নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি মার্কায় সে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। নামপ্রকাশ না করার শর্তে রূপনকে সমর্থনকারী বিএনপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলা হচ্ছে। তাই বিষয়টি পরোখ করতেই রূপন প্রার্থী হয়েছেন। তবে রূপন বিএনপির কেউ নয় দাবি করে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির বলেন, রূপন বিএনপির কোনো কমিটিতে নেই। সুতরাং তাকে নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথার কোনো কারণ নেই। এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি আর যাবেও না। তবে দলের যারা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে, টেবিল ঘড়ি মার্কার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন নিজেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। নির্বাচনী লিফলেট, ব্যানারেও তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় নগরীর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে এবং জাকের পার্টি মনোনীত গোলাপ ফুল মার্কার মেয়র প্রার্থী আলহাজ মো. মিজানুর রহমান বাচ্চু নগরীর কেডিসি ও কালিজিরা এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
আদর্শে মানুষের পরিচয় ॥ লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরিধান করে নির্বাচনের মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালানোর বিষয়ে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, আমি কালচারগুলো ভাঙার জন্যই এসেছি। বর্তমান কালচার হলো পোশাকে ভদ্রতার পরিচয় কিন্তু বাস্তবে পোশাকে ভদ্রতার পরিচয় নয়। মানুষের দেমাগ, আদর্শ এবং চরিত্র ভাল হলেই ভদ্রতার পরিচয়। আমি প্রমান করতে চাই, যারা পোশাক দিয়ে এ দেশের মানুষকে ধ্বংস করছে, খতম করছে, ডাকাতি করছে, চুরি করছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করছে আমি তাদের চেহারাকে উম্মোচন করতে চাই। পোশাকে মানুষের পরিচয় হয়না, চরিত্র এবং আদর্শে মানুষের পরিচয় হয়। সোমবার দুপুরে নগরীর বান্দরোডে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের মানুষ এই সিটির মধ্যে সমঅধিকার পাবে। তারা একজন নাগরিক হিসেবেই তাদের অধিকার ভোগ করবে, এখানে কোন ভেদাভেদ থাকবেনা।