লক্ষ্মীপুরে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে দুই সপ্তাহ ধরে প্রেমে ফাঁদে ও বিয়ের উদ্দেশ্যে ঘর বাহির নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগোপ্তা এলাকার যুবক বাবর ও তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে। ১৪ মে রোববার সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগোপ্তা সংলগ্ন চর মনসা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাবরের সহযোগীদের বন্ধুদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
অভিযোগ রয়েছে, দলবেঁেধ ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহ আলমসহ কয়েকজন গ্রাম্য মাতাব্বদেরা। এমনকি ভিকটিম কিশোরী এবং তার পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়ে থানা পুলিশ করা হলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি ধমকির অভিযোগ রয়েছে ধর্ষকসহ শালিশদারদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানান, ভিকটিম কিশোরীকে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ আলম তার বাড়িতে আটকে রেখেছেন। ধষর্ণের ঘটনার আলামত ও যাতে থানা পুলিশ করতে না পারে। ধর্ষকদের কথা মতো সবই করছেন ইউপি সদস্য শাহ আলম অভিযোগ করেছেন ভিকটিমের মা। এ কারণে তারা থানায় মামলা দিতে পারছেন না।
ভিকটিম কিশোরী জানায়, অভিযুক্ত বাবর পেশায় একজন ট্রাক্টর ও ধানকাটা মেশিনের চালক। তাদের বাড়ির পাশের জমি থেকে মেশিনের সাহায্যে বোরো ধান কাটে বাবর। এ সুবাদে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় তার। বাবর তার মোবাইল নম্বর নিয়ে কল দিয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে রাজি না হলেও পরে তাকে বিয়ের করার আশ্বাস দেন বাবর। এতে সে রাজি হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিশোরী আরও জানায়, বাবর তাকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় এবং চার লাখ টাকা কাবিন করারও সিদ্ধান্ত নেয়। রাজি না হলে তাকেসহ তার পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দেয় বাবর। পরে গত রোববার (২৮) সন্ধ্যার পর বাবর কিশোরীকে নিয়ে যেতে তাদের বাড়ির পাশে একটি রিকশা পাঠায়। কিশোরী মেয়েটি পরিবারের সকলের অগোচরে ওই রিকশায় করে সুতারগোপ্তা এলাকায় যায়। বাবর তাকে নামিয়ে একটি ফসলি মাঠে নিয়ে যান। এ সময় কিশোরীর মোবাইল ফোনটি রেখে দেন তিনি। মাঠে বাবরের এক বন্ধু অপেক্ষায় ছিল। পরে তার আরও এক বন্ধু সেখানে চলে আসে। বিপদ আঁচ করতে পেরে কিশোরী ফিরে যেতে চায়। এতে তিনজনের সঙ্গে ওই কিশোরীর হাতাহাতি হয়।
ওই কিশোরী বলেন, ঘটনার একপর্যায়ে বাবর তাকে প্রথমে ধর্ষণ করে, পরে তার অন্য বন্ধুরা তাকে ধর্ষণ করে। অন্যজন তাকে কিছু করার সুযোগ পাননি। পরে তোরাবগঞ্জ বাজার এলাকা সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পাশে তাকে রেখে পালিয়ে যায় বাবর ও তার বন্ধুরা। রাতে সেখানকার একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় সে এবং বাড়ির লোকজনের কাছে সবকিছু খুলে বলে। পরদিন সকালে ওই বাড়ির লোকজন কিশোরীকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
কিশোরী অভিযোগ, বাবর বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে প্রতারণা করেছে। বাবর বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে। বিষয়টি তিনি গোপন রাখে তার নিকট। তাই তার প্রলোভনে রাজি হয় সে। বাবর ও তার বন্ধুরা তাকে সর্বনাশ করেছে। বাবরের সঙ্গে যে দুজন ছিলো, তাদের আমি চিনতে পারিনি সে, তবে দেখলে চিনতে পারবে এমনটি দাবী করেছে ভিকটিম কিশোরী।
ভিকটিম কিশোরীর মা জানায়, তার কিশোরী মেয়ের সর্বনাশ করেছে বাবরসহ তার বন্ধুরা। তিনি বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারকে জানিয়েছেন। মেম্বার বলেছে বিচার করে দেবে। এজন্য তার কিশোরী 'মেয়েকে মেম্বাররের বাড়িতে রেখে আসতাম, এলাকার কেউ যাতে কিছু জিজ্ঞেস না কিরতে পারে। সাংবাদিক এলেও যেন তাদের কাছে কিছু না বলা হয়। যা বলার মেম্বার বলবেন। সেই কথা মতো হলে তার মেয়েকে ইজ্জত বিচার না পেয়ে আক্ষেপ করছেন তিনি। কিশোরীর বড়ভাই বলেন, তার ছোট বোনের জোরপূর্বক বাবর ও তার বন্ধুরা অনেক ক্ষতি করেছে। এ ঘ্টনায় থানা পুলিশের সহযোগীতা কামনা করেছেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম ভিকটিমকে আটকে রাখা ও ঘটনা ধামাঁচাপার দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কিশোরীর ন্যায় বিচার পাক তিনি নিজেও চান তাই তিনি কিশোরীকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। আটকে রাখা বিষয়টি ঠিক নয়। ইউপি সদস্য শাহ আলম আরো বলেন, কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বাবর ঘর থেকে বের করে নেয়। তাকে নাকি একটি ফসলের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে কিশোরী জানতে পারে বাবর বিবাহিত এবং তার সন্তান আছে। তাই কিশোরী বিয়ে না করে পালিয়ে গিয়ে রাতে এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরদিন তার বাড়িতে আসে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) মো. সোহেল রানা জানান, তাকে এ ঘ্টনা কেউ অবহিত করেন নাই। যে যেহেতু এ ঘটনা শুনেছেন। তিনি খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।