ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের মেঘনা নদী কেড়ে নিল মাদ্রাসা ছাত্র শিশু মোনায়েম খাঁর (০৮) প্রাণ। নিখোঁজের ১৮ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার দুপুরে মেঘনা নদীর প্রায় ৩০০ গজ ভেতর থেকে মোনায়েমের লাশ উদ্ধার করেছে ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল। মোনায়েমের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসন। এর আগে গত বুধবার বিকালে মামা এমরানের (১০) সাথে গরূর গোসল দেখতে মোনায়েম গিয়েছিল মেঘনা নদীতে। পানির ঘূর্ণায়মান স্রােতের (গোলায়) টানে মূহুর্তের মধ্যে নিখোঁজ হয়ে যায় মোনায়েম। শিশু এমরানও নিরূপায়। অনেক চেষ্টা করেও এমরান তার ভাগিনাকে রক্ষা করতে পারেনি।
নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মাদ্রাসা ছাত্র মোনায়েম উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের ঘাগরাজোর গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে। মোনায়েমের নানার বাড়ি একই ইউনিয়নের মেঘনার তীরবর্তী গ্রাম আজবপুরে। নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল মোনায়েম। বুধবার বিকাল ৩ টার দিকে মামা এমরান বাড়ির পাশের মেঘনা নদীতে গরূ গোসল করাতে যায়। শখ করে মামার সাথে মেঘনা নদীতে যায় মোনায়েমও। তাদের নিকটেই ছিল পানির ঘূর্ণায়মান স্রােত (গোলা)। যা কেবল নিচের দিকে টানছে। শিশু মোনায়েম বিষয়টি বুঝতে পারেনি। ওই স্রােতের মাঝে পড়ে হঠাৎ তলিয়ে যায় মোনায়েম। মামা এমরান ধরতে ধরতে মোনায়েমকে টেনে নেয় পানির নিচে নিয়ে যায় স্রােত। বিষয়টি জানাজানি হলে সকল আত্মীয়স্বজন মিলে বুধবার রাত পর্যন্ত নদীর পানিতে খুঁজে পায়নি মোনায়েমকে। বিকেলেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছিল অয়ার হাউজ অপারেটর সুবল চন্দ্র দেবনাথের নেতৃত্বে সরাইল ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। ডুবুরি না থাকায় তারা উদ্ধার কাজ করতে পারেননি। তবে তারা বিষয়টি চট্রগ্রাম প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে ঢাকা অফিসকে অবহিত করেন। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে হাজির হয় ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মো. জহিরূল ইসলামের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি ডুবুরি দল। এ সময় সরাইল ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ২৫-৩০ পানির নিচে প্রায় তিন ঘন্টা চেষ্টার ফলে তারা মোনায়েমের লাশটি উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। পরিবার বা স্বজনদের কোন ধরণের অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই শিশু মোনায়েমের লাশটি দাফন করা হয়েছে। দূর্ঘনায় নিহত মোনায়েমের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোনায়েমের দাফনে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছেন। গতকাল বিকেলে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন জেলা প্রশাসকের পক্ষে নিহতের পিতা আক্তার হোসেনের হাতে নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ময়না তদন্ত ছাড়া এই ধরণের লাশ দাফনের কোন বিধান নেই। লাশের অভিভাবকরা থানায় একটি ইউডি মামলা করেছেন। ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের অনুমতি প্রার্থনা করেছেন। ইউডি মামলা আছে তাই লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছি।