এফএনএস এ সংবাদ প্রকাশের পর নওগাঁর মহাদেবপুরে জয়পুর ডাঙ্গাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মারুফ হাসানকে (১৫) ইভটিজিংয়ের অপবাদ দিয়ে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাসান আলী লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা অভিযুক্ত সভাপতির বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। অনেকেই ওই সভাপতির আরো নানা কীর্তির কথা তুলে ধরার কথা বলেছেন। আবার সভাপতির অনুসারি কেউ কেউ বলেছেন ইভজিজিংয়ের কারণে সভাপতি ওই শিক্ষার্থীকে শাসন করে ঠিক কাজই করেছেন।
তবে আইনজ্ঞরা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন সভাপতি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে দন্ডনীয় অপরাধ করেছেন। নওগাঁ জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী সামিউন নবী সামীম বলেন, ইভটিজিংয়ের বিষয়ে প্রচলিত আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে নিজেই বিচারক সেজে সাজা দেয়া দন্ডনীয় অপরাধ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, যে কারণেই হোক কোন শিক্ষার্থীকে প্রহার করা কোনক্রমেই কাম্য নয়। তিনি বৃহস্পতিবারই (১ জুন) মহাদেবপুরে নতুন যোগদান করেছেন। রোববার অফিসে এসে বিষয়টি ভাল করে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।
ঘটনার পরপরই একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনাটির যাতে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া না হয় সেজন্য তারা তৎপর রয়েছেন। ঘটনার দিন বুধবার (৩১ মে) সারাদিন তারা আহত মারুফ হাসানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দেয়। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে পরদিন সকালে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানোর পর থেকে তাদের তৎপরতা আরো বেড়ে যায়। তারা বিষয়টি মিমাংশা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়।
স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক কোঠায় হাসান আলী ওই স্কুলের সভাপতি পদপ্রার্থী হন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। কিছুদিন আগে স্কুলের এক অনুষ্ঠানের দিন তিনি অর্ধশতাধিক ফেন্সিডিল বিতরণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এভাবে তিনি সতীর্থদের সমর্থন আদায় করেন। এ ছাড়া অনলাইনে অবৈধ কিপ্টো ক্যারেন্সি বিট কয়েন লেনদেনের কারবার ও আরো নানান কীর্তির সাথে জড়িত রয়েছেন। তার এসব বিষয়ও তুলে আনার দাবি জানান স্থানীয়রা। এসব বিষয় জানতে শুক্রবার বিকেলে সভাপতির মোবাইলফোনে বার বার কল দেয়া হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়গুলো অস্বীকার না করে বলেন, প্রহারের শিকার ছাত্র মারুফ হাসানের পরিবার খুবই শান্ত শিষ্ট। বয়সের কারণে কোন কিছু করতে পারে। কিন্তু এর আগে শিক্ষকরা কখনোই তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি বা শাসনও করেননি। সভাপতি সাহেব নিজে শাসন করায় বিষয়টি বিতর্কীত হয়েছে। এ ছাড়া গরুপেটার মত করে পিটানাও যুক্তিসঙ্গত হয়নি। তবে বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছেন। আজকালের মধ্যেই বিষয়টি মিমাংশা হবে বলে তিনি জানান।
ঘটনার দুইদিন পার হয়ে গেলেও এ ব্যাপারে আইনগত কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেই ব্যবস্থা নিবেন। তবে মিমাংশা হোক বা আইনগত ব্যবস্থা হোক অভিযুক্ত সভাপতিকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জনতার।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বার্তা সংস্থা এফএনএস এর অনলাইন সংখ্যায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিক কাজী সাঈদ টিটো, গৌতম কুমার মহন্ত, কাজী সামছুজ্জোহা মিলন, ইউসুফ আলী সুমন, সোহেল রানা, আবদুর রহমান, সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম মহাদেবপুর দর্পণ নামক ফেসবুক আইডিতে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি মারুফ হাসানের লাইভ সম্প্রচার করেন। এই ভিডিও সম্প্রচার ও এফএনএস এ প্রকাশিত সংবাদের লিংক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।