আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারনার একেবারে শেষসময়ে এসে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন প্রতিদ্বন্ধীতাকারী মেয়র প্রার্থীরা। পাশাপাশি একই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্ধীতাকরা কাউন্সিলর প্রার্থীদের একে অপরের প্রচারণায় বাঁধা, মারধর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, মাইক ভাঙচুরসহ ব্যাপক অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে টিফিন ক্যারিয়ার মার্কার কাউন্সিলর প্রার্থী শাকিল হোসেন পলাশ ও তার কর্মীদের মারধর এবং নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী রিয়াদ হোসেন খানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে ৪ জুন দুপুরে কাউন্সিলর প্রার্থী শাকিল হোসেন পলাশের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে জড়ো হন। তারা সেখানে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেন।
ওইদিন রাতে কাউন্সিলর প্রার্থী শাকিল হোসেন পলাশ অভিযোগ করে বলেন, নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালেদাবাদ কলোনির পুকুর পাড়ে আমার নির্বাচনী কার্যালয়। ঘটনার সময় ৪ জুন দুপুরে আমি অফিসে বসা ছিলাম, তখন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী রিয়াদ হোসেন খানের সমর্থকরা ৫/৭টি মোটরসাইকেলে আকস্মিক অফিসের সামনে আসে। পরবর্তীতে মোটরসাইকেলে থাকা রিয়াদের সমর্থক রুবেল, রাজন, হিরাসহ তাদের সহযোগীরা অফিসে ঢুকে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায়। একপর্যায়ে পিস্তলের বাট ও অফিসে থাকা টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে আমাকে পিটিয়ে আহত করে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বিপিএম বলেন, প্রার্থীর ওপর হামলার একটি ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এরআগে ৩ জুন দিবাগত রাতে প্রচারণার গাড়ি (অটোরিকশা) ও মাইক ভাংচুরের অভিযোগ করেছেন, সংরক্ষিত-৫ (১২, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড) আসনের বই মার্কার কাউন্সিলর প্রার্থী কামরুন্নাহার রোজী। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তিনি (রোজী) রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কামরুন্নাহার রোজী অভিযোগ করে বলেন, ৩ জুন দিবাগত রাতে নগরীর ফরেস্টার বাড়ি এলাকায় প্রচারণা চলাকালে একই ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ইসরাত জাহান লাভলীর সমর্থক শাহরুখ, সাগর, শাওনসহ ১০/১২ জনে আমার প্রচার গাড়িতে হামলা চালায়। তারা গাড়ির চালক সজলকে মারধর, অটোরিকশা ভাংচুর করে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। খবর পেয়ে আমার কয়েকজন কর্মী সেখানে গেলে তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এদিকে ৪ জুন বিকেলে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণায় বাঁধা, কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও হুমকির অভিযোগে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাধারণ কাউন্সিলর পদের ঘুড়ি মার্কার প্রার্থী সাফিন মাহামুদ তারিক ও ঠেলাগাড়ি মার্কার প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমান আনিছ শরীফ। নগরীর চান্দুমার্কেট এলাকার নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঘুড়ি মার্কার প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহামুদ তারিক বলেন, আমার পাঁচজন নারীকর্মী ঘুড়ি মার্কার আর পাঁচজনে নৌকা মার্কার হ্যান্ডবিল নিয়ে প্রচারণায় নামে। তখন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী আনিছ শরীফের সমর্থকরা নারী কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। খবর পেয়ে আমি কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে আনিছ শরীফের পুরান বাড়ি এলাকায় পৌঁছলে আনিছের ভাই মোহন শরীফসহ তাদের সমর্থকরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
একইদিন সন্ধ্যায় ধান গবেষণা রোডের নির্বাচনী কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে ঠেলাগাড়ি মার্কার প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমান আনিছ শরীফ বলেন, সাফিন মাহামুদ তারিক ও তার লোকজন প্রকাশ্যে পোস্টার ছিঁড়ে আমাকে গালিগালাজ করে। আমরা ঘটাস্থলে গিয়ে নৌকা মার্কার পোস্টার ছেঁড়ার সময় একজনকে ও পরে আরেকজনকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছি।
অপরদিকে নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে টিফিন ক্যারিয়ার মার্কার কাউন্সিলর প্রার্থী মারুফ আহম্মেদ জিয়া তার নির্বাচনী প্রচরনায় বাঁধা দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তিনি ইতোমধ্যে বেশ কয়েক বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরআগে কারাগারে থাকা নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. রইজ আহম্মেদ মান্নার নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে কাউনিয়াস্থ প্রার্থীর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন মান্নার বড় ভাই মুন্না হাওলাদার।
নৌকার পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতাদের গণসংযোগ ॥ নৌকা মার্কার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে সাথে নিয়ে নগরীর বাংলাবাজার এলাকার গণসংযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দরা ভোটারদের প্রতি অনুরোধ করেন। গণসংযোগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, নৌকা মার্কার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দপ্তর সেলের প্রধান অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপণ্ডকমিটির সাবেক সদস্য জহিরুল ইসলাম শাহিনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাচ্যের ভেনিসের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবো ॥ নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে খোকন সেরনিয়াবাত গণসংযোগে নেমে ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশালকে নতুনভাবে সাজানোর লক্ষ্যে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে। বরিশাল নগরী একসময় উন্নয়নের উদাহরণ ছিলো। ছিলো ঐতিহ্যের প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে পরিচিত। গত ১০ বছরে এখানে দায়িত্বরত জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। তাই প্রাচ্যের ভেনিসের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনে নতুন বরিশাল গড়তে প্রধানমন্ত্রী আমাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাই বরিশালবাসী আগামী ১২ জুন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সেই কাঙ্খিত উন্নয়ন করার সুযোগ দেবেন বলে আমি শতভাগ বিশ্বাস করছি।
ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে ॥ আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করতে জরুরী অভ্যন্তরীণ বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বহু ধরনের সংকটের মধ্যদিয়ে নির্বাচন কমিটির কাজ শুরু হয়েছে। এখানে অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সব সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে একযোগে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কাজের গতি আরো বাড়াতে হবে। সবাইকে সমান প্রতিদ্বন্ধী ভাবতে হবে। নারীদের টিম বৃদ্ধি করতে হবে। জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, একতার কোন বিকল্প নেই। আমাদের সব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে বরিশালের উন্নয়ন ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মান রক্ষার জন্য খোকন সেরনিয়াবাতকে নির্বাচিত করতে হবে। নগরীর সদর রোডস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার।
গুম-খুনের সাথে জড়িতদের ভোট নেই ॥ জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙর মার্কার মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, যারা বিরোধী দলকে রাজনীতি করতে সুযোগ দেয়না। নির্বিচারে হামলা, মামলা আর গুম খুনের রাজনীতি করে। এবার ভোটের মাধ্যমে তাদের জবাব দিবে বরিশালের জনগণ। নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর এলাকার উঠান বৈঠকে মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, গাজীপুরবাসী ভুল করেনি, বরিশালবাসীও এবার আর ভুল করবেন না। আমি বিশ্বাস করি ভোটাররা ভোট দিতে পারলে, ডুবন্ত নৌকা আর জাগবেনা। উঠান বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, রফিকুল ইসলাম গফুর, জাপার কেন্দ্রীয় নেতা এস এম রহমান পারভেজ, অ্যাডভোকেট এম এ জলিল, নজরুল ইসলাম হেমায়েত, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।
পুলিশের সাথে হাতপাখা প্রার্থীর বাকযুদ্ধ ॥ সিটি নির্বাচনে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, আমি বলদ না, আমি স্বশিক্ষিত লোক না, শিক্ষিত লোক আমি। আমি আইন জানি। রোববার দিবাগত রাতে নগরীতে গণসংযোগকালে এক পুলিশ অফিসারের সতর্কবার্তার জবাবে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে হাতপাখার প্রার্থী এ কথা বলেন। এরআগে হাতপাখার গণসংযোগ চলাকালে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিছিল করার অভিযোগ ওঠে নৌকার কর্মীদের বিরুদ্ধে। এনিয়ে পুলিশের সাথে হাতপাখার প্রার্থীর তুমুল বাগ্বিতন্ডা শুরু হয়। যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। আড়াই মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, মেট্রোপলিটন পুলিশের এসআই অলীব সাহাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন হাতপাখার প্রার্থী। তিনি বার বার ওই পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসা করছেন মিছিল বন্ধ করতে পেরেছেন কি না। ভিডিওর একপর্যায়ে এসআই অলীব হাতের ঘড়ি দেখিয়ে বলেন, রাত সাড়ে আটটার পরে মিছিল হবেনা। তখনই হাতপাখার প্রার্থী বলেন, নির্বাচনে মিছিল অবৈধ, গণসংযোগ অবৈধ না। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গণসংযোগ চলবে। আমি বলদ না, আমি স্ব-শিক্ষিত লোক না, শিক্ষিত লোক আমি। আমি আইন জানি। ভিডিওর শেষে হাতপাখার প্রার্থী ওই পুলিশ অফিসারকে বলেন, আপনার নাম শুনছি আমি বার বার, দোয়া করেন।
তিন পরিবারে ছয়জন প্রার্থী ॥ নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা চিত্রসাংবাদিক রেদওয়ান রানা সাধারণ কাউন্সিলর পদে ও তার বড় ভাই সুমন আহম্মেদের স্ত্রী ফাতেমা রোজী সংরক্ষিত ১০ নম্বর আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে মারুফ আহম্মেদ জিয়া ও সংরক্ষিত ৪ নম্বর আসনে তার বড় বোন আয়শা তৌহিদা লুনা প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। এ ছাড়া নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির সাধারণ কাউন্সিলর এবং তার স্ত্রী নাজনীন আক্তার লিনা সংরক্ষিত-৯ আসনের কাউন্সিলর পদে লড়াই করছেন।
নৌকা ডোবাতে তিন কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগ ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে বিষোদগার করায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমানকে। সোমবার সকালে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এবং মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন সেরনিয়াবাত সুমন। তারা জানিয়েছেন, পৃথক দুটি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শরীফ মো. আনিছুর রহমানকে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকা এবং শতভাগ মিথ্যা তথ্য প্রচার করায় জেলা ও মহানগর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।
সূত্রমতে, শরীফ মো. আনিছুর রহমান একাধারে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং চলমান নির্বাচনের প্রার্থী। আনিছুর রহমান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী। রোববার দুপুরে আনিছুর রহমান তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাদিক অনুসারী সাফিন মাহমুদ তারিক ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে নৌকার পোস্টার ছেড়ার অভিযোগে হামলা চালান। এনিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন উভয় প্রার্থী। এ সময় শরীফ মো. আনিছুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ঢাকায় বসে নৌকা ডোবাতে হাতপাখার প্রার্থীকে তিন কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমরা যে ১০ জন কাউন্সিলর রয়েছি তার প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্ধী তিনজন করে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। তাদের নির্বাচনী খরচ ৩০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে পেমেন্ট করা হয়েছে। এসব করেছেন যাকে আমরা রাজনৈতিক অভিভাবক বলি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও তার ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ। এ বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই আনিছুর রহমানকে দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
সাড়ে চার হাজার সদস্য ॥ সিটি নির্বাচনে সবধরনের নাশকতা প্রতিরোধ ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রায় সাড়ে চার হাজার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন। পাশাপাশি সর্বমোট ৪০ জন নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ পরিদর্শক দল হিসেবে ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি ভোট কেন্দ্রের প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন ভোটারদের নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান নিশ্চিত করতে পুলিশের সাথে আনসার ও ভিডিপি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, কোষ্টগার্ডের সদস্যদের সমন্বয়ে সর্বমোট প্রায় সাড়ে চার হাজার সদস্য নির্বাচনের পরের দিন পর্যন্ত কাজ করবে। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনের কো-অর্ডিনেটর বাদল অধিকারী।