বাংলাদেশে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি এবং ভালো বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ-২৩ এর শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, মানুষের আয় বেড়েছে, সেই সঙ্গে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে মানুষ পুষ্টির নিশ্চয়তাও পাঁচ্ছে। পুষ্টির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে আমাদের নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে। কারণ নারীরাই বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া করান এবং দেখাশোনা করেন। নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে তাদের শিক্ষা দিতে হবে। তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের চাকরি ও শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়ন অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের ছেলে ও মেয়েরা এবং স্বল্পতা, জিংক এবং মাইক্রো নিউটেন্ট ডেফিশিয়েন্সিতে ভোগে। এসব ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে এ সমস্যাগুলো অনেক কমে এসেছে। আমাদের লক্ষ্য আরও কমিয়ে আনা। তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন পুষ্টির অভাবে বাচ্চারা খর্বকায় হয়। আমাদের দেশে খর্বকায় ৪০ শতাংশ ছিল বর্তমানে সেটা নেমে ২০ শতাংশে এসেছে। অর্থাৎ তারা এখন খাদ্য এবং পুষ্টি পাঁচ্ছে। যেহেতু এখনো অনেক মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে, তাই সেখানে পুষ্টির অভাব রয়েছে। পুষ্টির অভাবে অনেক অসুখবিসুখ হয়ে থাকে। পুষ্টি কমলে সমস্যা এবং বাড়লেও সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের দেশে এখন ওবেসিটি অনেক বেড়েছে। ছেলে ও মেয়ে এবং নারীদের মধ্যে বর্তমানে ওবেসিটি বেশি দেখা দিচ্ছে। ব্যালেন্স করে না খেলে আমাদের বিভিন্ন অসংক্রামক দেখা দেয়। সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, পুষ্টির অভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপরে চাপ বাড়বে। শিক্ষার ওপরেও প্রভাব পড়বে। পুষ্টির অভাবের শিক্ষা গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যায়, উৎপাদনও কমে যায়। পুষ্টির একটি বিরাট প্রভাব রয়েছে। আমাদের দেশে এখন রাতকানা রোগ নেই। আমাদের ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা ২১০০ ওপরে, এটা অনেক ভালো। বাংলাদেশে ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা পাকিস্তান এবং ভারতের থেকেও বেশি। আবার আমাদের দেশের শহর অঞ্চল থেকে গ্রামে ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা আরও বেশি। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মাদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম, জনস্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান।
এদিকে বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি গণমাধ্যমে আলোচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাঁচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমে আলোচিত বিভিন্ন অনিয়ম-অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রমসহ নানা অভিযোগই আমাদের কানে এসেছে। বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে আমরা খতিয়ে দেখবো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এই হাসপাতালে গুরুতর অনিয়ম আমরা হতে দিতে পারি না। তবে, আপনারা জানেন বিএসএমএমইউ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। যে কারণে এই হাসপাতালের নিয়োগ, ক্রয়-বিক্রয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিয়ে থাকে। আমাদের সংশ্লিষ্টতা খুব বেশি থাকে না। তিনি বলেন, কিন্তু হাসপাতালটিতে সরকার অর্থায়ন করে থাকে। সে হিসাবে আমরা অবশ্যই অনিয়মের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবো। আমরা চাই না এখানে আসা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হোক। জাহিদ মালেক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অনেক আশা-আকাক্সক্ষার জায়গা। এমনকি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি এক হাজার ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে। যদিও নিয়োগ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে, বড় একটি নিয়োগ কিন্তু সামনে আছে। সেই নিয়োগের কমিটিতে উপাঁচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ নেই। একটি শক্তিশালী কমিটি করেই সেই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।