সংলাপ চলমান থাকবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সবকিছুই সংলাপের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে। বুধবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে স্বাধীনতা পুরষ্কার-২০২৩ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় দল। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নাই। জামায়াতে ইসলামীকে বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা রাজনীতি করেন তারা সভা-সমাবেশ করবে, তাদের মতামত প্রদর্শন করবে-জানাবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমার জানামতে, জামায়াতে ইসলামি এখনও নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত দল নয়। কাজেই এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার নিরূপণ করবেন। সমাবেশ করতে দিলে কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা রয়েছে কি না সব বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত দিবেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আগামী নির্বাচনে তাদের কোনো ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পনা আছে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। তারা যেটা বলেছে সেটাই যথেষ্ট। তারাই মনিটরিং করছে। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রদূতরা যেন তাদের শিষ্টাচার মেনে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রসংশা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো একসময় ৯/১০ তলার উপরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা ছিল না, কিন্তু বর্তমানে সর্বাধিক ৬৮ মিটার উচ্চতার টিটিএল গাড়ির মাধ্যমে ২৪ তলা ভবনে লাগা আগুনও নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, একটা সময় গেছে আগুন ধরলে জনগণই আগুন নিয়ন্ত্রণ করতেন। আগুন নিভে গেলে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট গিয়ে পৌঁছতো। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩ অর্জন করায় আমি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালকসহ সব সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ অর্জন আপনাদের মনোবলকে আরও দৃঢ় করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক করায় এবং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ব্যবস্থাও নিয়েছে সরকার। ফলে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সদস্য দেশের সেবার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন দেশের প্রতিটি উপজেলায় নূন্যতম ১টি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প অনুমোদন করার পাশাপাশি ২০১১ সালের ২ জুলাই নিজে উপস্থিত থেকে হাজারীবাগ ফায়ার স্টেশনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা বাস্তবায়নের কাজ। সবশেষ চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের ৪০টি নতুন ফায়ার স্টেশনের শুভ উদ্বোধন করেন। বর্তমানে সারাদেশে ৪৯৫টি ফায়ার স্টেশনের চালু রয়েছে। যা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ২০৪টি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, অগ্নিনির্বাপণ কাজ সহজ করতে রিমোট কন্ট্রোল গাড়িও এ প্রতিষ্ঠানের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্বের সর্বাধিক ৬৮ মিটার উচ্চতার টিটিএল গাড়ি এ বাহিনীর যান্ত্রিক বছরে যুক্ত হয়েছে। একসময় ১০-১২ তলার ওপরে তাদের কাজ করার সরঞ্জাম ছিল না। এখন ২৪তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ কাজ করতে পারবে ফায়ার সার্ভিস। এ বছর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ জনসেবায় স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়েছে। এ অর্জনে আমরা সবাই গর্বিত। স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩ অর্জন ফায়ার সার্ভিসের জন্য একটি যুগান্তরকারী ঘটনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের যেমন একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস করি তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন। আশা করি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সেই উন্নত দেশের পরিপূর্ণ অগ্নিনিরাপত্তা এবং দুর্যোগ দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিশ্বমানের সেবা বাহিনীতে পরিণত হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কমিউনিটি ভলান্টিয়াররা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।