খুলনার পাইকগাছায় প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও কান ধরে চেয়ার থেকে উঠিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন বিদ্যালয়েরই পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আরশাদ আলী বিশ্বাস। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরারবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ঘটনার শিকার প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার ঘোষ। অভিযোগে বলা হয়, রাড়-লী ভুবন মোহনী উচ্চমাধ্যমিকবালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আরশাদ আলী বিশ্বাস বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার ঘোষকে শিক্ষক-কর্মচারী পদে নিয়োগ দিতে সভা আহবান করতে বলে আসছেন। কিন্তু আদালতে কমিটি সংক্রান্তে মামলা চলমান থাকায় তিনি সভা আহ্বান করতে অসম্মতি জানিয়ে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের মধ্যে মতদ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সর্বশেষ ৫ জুন বিদ্যালয় চলাকালীন সভাপতি কতিপয় বহিরাগতদের সাথে নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে তিনি ফের তাকে সভা আহ্বান করতে নির্দেশ দেন তাকে। এ সময় প্রধান শিক্ষক ইউএনও ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পরে তাকে জানাবেন বলে জানান। এরপর সভাপতি তাকে বলেন, তিনি যেভাবে চান সেভাবে কাজ করতে হবে, অন্যথায় হলে চাকরি ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে সভাপতি তাকে রেজুলেশন খাতা ও নোটিশ বহি বের করে দিতে বলেন। তবে তার কথামত রেজুলেশন কিংবা নোটিশ বহি না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সভাপতি প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার ঘোষকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত পূর্বক অপমান করে চেয়ার থেকে কান ধরে উঠিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। ঘটনায় প্রধান শিক্ষক গৌতম ঘোষ ঐ দিনই বিষয়টি অবহিতপূর্বক ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি আরশাদ আলী বিশ্বাস বলেন, একজন প্রধান শিক্ষকের সাথে এমন ঘটনার প্রশ্নই উঠেনা। তবে এ সময় তিনি তার কাছে রেজুলেশন খাতা চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষেকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে তার কার্যালয়ে বসেছিলেন। সেখানে সভাপতি ঘটনার কথা অস্বীকার করলেও প্রধান শিক্ষক তার বক্তব্যে অনড় ছিলেন। তাই বিষয়টি সমাধান সম্ভব হয়নি। তবে এ সময় তিনি আরো বলেন, বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য স্যার পিসি রায়ের স্মৃতি বিজড়িত গ্রামের বাড়ি পাইকগাছার রাড়-লি ভুবন মোহনী উচ্চমাধ্যমিকবালিকা বিদ্যালয়টি ১৮৫০খৃঃ বিজ্ঞানীর পিতা উপমহাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রদূত হরিশচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেন। নিজ স্ত্রী ভুবনমোহিনী দেবীর নামে উপমহাদেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন তিনি। দীর্ঘকাল বিদ্যাপীঠটির ভৌত-অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় বহুলাংশে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এরপর ১৯৮৬ সালের দিকে বিদ্যালয়ের তৎকালীণ প্রধান শিক্ষক হরেকৃষ্ণ দাশ বিদ্যালয়টি নিন্ম মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করার প্রস্তাব করলে স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সায় আসে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের। এ সময় সরকারী নিয়ম অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানের নিন্ম মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করতে বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তির যোগান দেন স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ গোলদার। তিনি বিদ্যালয়ের নামে ১ একর ৩০ শতক জমি রেজিস্ট্রি কোবলামূলে দান করেন। যার দলিল নং ৭০০৯, তাং ১৬/০৯/১৯৮৬। এরপর বিদ্যাপীঠটি নিন্ম মাধ্যমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। সর্বশেষ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কর্তৃক প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণে তারা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।