পৃথিবীতে মহাসাগরের গুরুত্ব তুলে ধরতেই প্রতিবছর পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব মহাসাগর দিবস। বিশ্ব মহাসাগর দিবস মানুষকে সমুদ্রের গুনাগুন ও দৈনন্দিন জীবনে তারা যে প্রধান ভূমিকা পালন করে তা স্মরণ করিয়ে দেয়। জাতিসংঘের মতে, দিবসটি সমুদ্রের উপর মানুষের ক্রিয়াকলাপের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রের প্রজাতির জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা। এছাড়াও, বিশ্বব্যাপী সমুদ্র এবং সম্পদের টেকসই ও উন্নীত করার জন্য এবং জনসচেতনতা বাড়াতে দিবসটি পালন করা হয়। পৃথিবীর মোট ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে এ মহাসাগর। নীল সমুদ্রের ঢেউয়ের অতল গভীরে কত রহস্যের সন্ধান রয়েছে তার বুকে। তারই হদিস পেতে দিন-রাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গবেষণায় উঠে আসছে নিত্য নতুন তথ্য। এছাড়াও পৃথিবীর প্রায় ৯৪ শতাংশ প্রাণী প্রজাতি সমুদ্রের নীচে বাস করে। মহাসাগরগুলি পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে। অর্থাৎ সমুদ্রের নীচে প্রচুর সামুদ্রিক প্রজাতি বাস করে এবং তারাই এই অক্সিজেন উৎপাদন করে। তাছাড়া বিশ্ব মহাসাগর দিবস আমাদের বেঁচে থাকার জন্য একটি সুস্থ নীল গ্রহের উপর আমাদের ভাগ করা সমুদ্রের গুরুত্ব এবং মানবতার নির্ভরতা স্বীকার করার একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে। এটি সমুদ্রকে রক্ষা, পুনরুদ্ধার ও সাগর-মহাসাগর সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়িয়ে তোলে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরোতে ধরিত্রী সম্মেলনে এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ২০০৮ সালের পর থেকে জাতিসংঘ এই দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। মূলত ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ববাসী ৮ জুন পালন করে আসছে বিশ্ব মহাসাগর দিবস হিসেবে। গোটা বিশ্বে সমুদ্র ও উপকূলবর্তী এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণিজগত আজ বিপন্ন প্রায়। অথচ পৃথিবীতে মানব জাতির টিকে থাকার অন্যতম চাবিকাঠি হল সাগর। খাদ্য, ওষুধসহ বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের একটি বড় অংশ আসে মহাসাগর থেকে। তাছাড়া মহাসাগরগুলো বায়ুমণ্ডলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে। কিন্তু মানুষের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জলবায়ুর বৈরী থাবায় মহাসাগরগুলোর পরিবেশ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে এর জীববৈচিত্র্য। আমাদের মহাসাগরের সৌন্দর্য এবং বিস্তৃত জীববৈচিত্র্য সত্ত্বেও, তাদের ভবিষ্যত ভয়াবহ দেখায়। কারণ মানুষের কার্যকলাপের কারণে মহাসাগর মারা যাচ্ছে। আমরা শুধু আমাদের মূল্যবান মহাসাগরকেই দূষিত করছি না, আমরা অতিরিক্ত মাছ ধরার মাধ্যমে তাদের ক্ষতি করছি। আমাদের মহাসাগরকে বাঁচাতে হলে তাদের সাথে আমাদের আরো সুষম এবং সংবেদনশীল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কিভাবে জনসাধারণকে সমুদ্রে প্রভাব ফেলছে সে সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষিত করতে হবে, মহাসাগরের পক্ষে সমর্থন করে এমন একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং বিশ্বজুড়ে মানুষকে পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ ও একত্র করতে হবে। তাহলে হয়তো ধ্বংসের হাত থেকে জীববৈচিত্র্যতে রক্ষা করা যেতে পারে।