শুধু কাগুজে আইন নয়, চাই যথাযথ ব্যবহার

এফএনএস: : | প্রকাশ: ৮ জুন, ২০২৩, ০৩:১২ এএম

বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু এর সুষ্ঠ ব্যাবস্থপনা হচ্ছে না। ব্যবস্থাপনার অভাবে প্লাস্টিক পোড়ানো হয়। কিংবা আশপাশে ও নদী-নালায় ফেলে দেয়া হয়। প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে, বাড়ছে বায়ু দূষণ। এমন পরিস্থিতির মাঝে গত ৪ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হলো। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে জানানো হয়, দেশে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো হয়। যা ব্যাপক ভাবে বায়ু দূষণ করছে। প্লাস্টিক পোড়ানোসহ নানাভাবে বায়ু দূষণের কারণে ২০১৯ সালে ১ লাখ ৪৬ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে অন্য এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়। অন্যদিকে ঢাকায় প্রতিবেদনে ৬০০ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক জমা হয়। এর ১০ ভাগ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ কারণে ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে ৮ দশমিক ৫ টন কার্বনডাইঅক্সাইড যুক্ত হয়েছে, যা আমাদের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ১১ শতাংশ দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। প্লাস্টিক বর্জ্যসহ ব্যাপক ভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে বুড়িগঙ্গা তুরাগ,বালু, শীতলক্ষ্যা ও কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের অন্যতম দূষিত নদীতে পরিণত হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে আমাদের বাস্তুতন্ত্র এবং ভূমির ব্যাপক দূষণ ঘটনায় গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব আজ হুমকির  ‘সম্মুখীন’। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ২০০২ সালে বাংলাদেশ পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ হলেও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও লেমিনেটেড প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় নি। এতে প্লাস্টিক দূষণ অব্যাহত রয়েছে এবং পরিবেশ দূষণের উদ্বেগ বাড়ছে। বৈশ্বিক মোট প্লাস্টিকের দূষণের ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাংলাদেশ হয়। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ আইন করা হলেও কার্যকর প্রয়োগের অভাবে প্লাস্টিক থেকে পরিবেশ দূষণ শুধু অব্যাহত নয়, বরং উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই এখন সময় এসেছে প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োজন। কাজেই পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৬ক ধারা সংশোধন, দূষণ কর আরোপ এবং প্লাস্টিক দূষণে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের জবাবদিহি করার জন্য পরিবেশ আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সজাগ হতে হবে। তা না হলে আপনি পথে চলতে যত্রতত্র পলিথিন পড়ে থাকা বন্ধ হবে না। সবাই নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, মাটি খুঁড়লে যে পলিথিন দেখা যায় তা খুব সহজে মাটির সাথে মিশে  যেতে পারে না। বছরের পর বছর পলিথিন অ-পচনশীল অবস্থায় থেকে যায়। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে পলিথিন ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন নয়, আইনের যথাযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করে মানুষকে সচেতন করতে হবে প্লাস্টিক ব্যবহারে। কিন্তু যে ভাবে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে, তাতে হয়তো এখন আর তা নিরুৎসাহিত  করা সম্ভব হবে না। তাই প্লাস্টিক রিসাইক্লিনিংয়ের মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে তা করা যেতে পারে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW