বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তার গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মানিক গাজীর বাড়িতে বসত ঘর ভাঙচুর লুটপাট ও জমি দখলের অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভূক্তভোগী মজিবর গাজীর স্ত্রী শেফালী বেগম বাদি হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় মনিষা চক্রবর্তীকে প্রধান আসামি করে নামধারী তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা ৮০/৯০ জনকে আসামি করে অভিযোগটি দায়ের করেন। বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এস.এম মাকসুদুুর রহমান অভিযোগপ্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, বাড়ি ঘর ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। লিখিত অভিযোগের তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে থানা কম্পাউন্ডে ভূক্তভোগী মজিবর গাজীর স্ত্রী শেফালী বেগম জানান, গত ৭ জুন দুপুর বারোটার দিকে বাড়িতে পুরুষ লোক না থাকার সুযোগে মনিষা চক্রবর্তী শতাধিক ভাড়াটিয়া লোকজন ও সাতটি পিকআপ ভ্যান ও একটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসে বাড়ির নারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় তারা জামাল গাজী, শহিদ গাজী ও সুজন গাজীর তিনটি কাঠের বসত ঘর ও মজিবর গাজীর একটি বিল্ডিং এর পাকা ঘর ভাঙচুর করে লুটপাট চালায়। শেফালী বেগম আরও জানান, মনীষা চক্রবর্তীর সাথে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। আমরা মনীষা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলাও করেছি। কিন্তু সে আইনকানুন মানছে না। আমাদের বাড়িঘর ও সম্পত্তি তার (মনিষা) পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে আমাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে দখল নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাটের কারণে বাড়িতে তিনটি পরিবারের ২০ জন সদস্য এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।
এ বিষয়ে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ওই সম্পত্তির সকল কাগজপত্র আমার পিতার নামে। আমি কাগজপত্র ছাড়া ওই জমিতে আসিনি এবং এই বাড়ি ঘর আমার পূর্বপুরুষদের। গাজী পরিবারের লোকজনকে আমরাই থাকতে দিয়েছি। জমি নিয়ে তাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। মনিষা আরও বলেন, আমি আমার বাবার জমিতে থাকা আমাদের ঘর ভেঙে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুধীর কুমার স্মৃতি পাঠাগার ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান শামীম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে শুনে আসছি, ওইটা গাজী বাড়ি। মনিষা চক্রবর্তী একজন সম্মানিত লোক তাদের নাকি গাজী বাড়িতে ২২ শতক জমি রয়েছে। সেটা থাকতেই পারে, তবে তিনি বারবার বহিরাগত লোকজন নিয়ে এলাকায় এসে ভীতির সৃষ্টি করছে। এটা মোটেও তিনি ঠিক করছেন না। তার কাগজপত্র থাকলে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতায় জমি দখল করতে পারতেন। যেখানে তিনি (মনিষা) একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী, সেখানে তিনি তিনটি পরিবারের মাথাগোঁজার ঠাঁই কেড়ে নিতে পারেন না।
ইউপি চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন সিকদার বলেন, মনীষা চক্রবর্তী বহিরাগত শতাধিক লোকজন ও পাঁচটি ট্রাক ভাড়া করে নিয়ে এসে অন্যের বাড়িঘর ভাঙচুর করার খবর পেয়ে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি, জেলা পুলিশ সুপার ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রশাসনের অবহেলার কারণে মনিষা চক্রবর্তী তার ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে ওই তিনটি পরিবারকে আজ পথে বসিয়েছে।