আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়ায় বেড়ী বাঁধের ভাঙন রোধে জিও বস্তা ডাম্পিংয়ে অনিয়মসহ নানা দুর্নীতির প্রতিকার প্রার্থনা করেছে এলাকাবাসী।
কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের আকরাম হোসেন সানা, আবু আব্দুল্লাহ, ব্যবসায়ী আনিছুজ্জামান, ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম সানা, ব্যবসায়ী আহসান উল্লাহ প্রমুখ জানান, কাজের ঠিকাদার সুজা আহমেদ ও এসও আলমগীরের তত্বাবধানে বাঁধ রক্ষায় জিও বস্তার কাজ করান হয়। এমনিতেই কাজে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা গেছে। তার উপর জিও বস্তায় বালু ভরাট না করে অনেক বস্তায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। সঠিক স্থানে ডাম্পিং না করে শ্রমিকরা বস্তা কেটে নদীতে বালু ফেলে দিয়েছে। কাজের এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের সমন্বয়ে সৃষ্ট সিন্ডিকেট স্থানীয়দের উপর চড়াও হয়ে উঠে। এ সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দূর্নীতির করাণেই উপকূল জুড়ে মানুষের দুর্ভোগ ও মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই দূর্ভোগ থেকে বাঁচতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পানিউন্নয়ন বোর্ডের দায়ী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে একাধিকবার আমাদের বসত ভিটা নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ বাসস্থানের মত মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রায় ৩৫ হাজার জিও বস্তা আত্মসাতের অভিযোগ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শহিদুল্লাহ সানা বলেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর পোল্ডার নং ৭/২ এর অধীন কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় নদী ভাঙন রোধে সর্বশেষ বরাদ্দকৃত ৭টি প্যাকেজে প্রায় ৬০ হাজার জিওবস্তা ডাম্পিংয়ের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত ২২ থেকে ২৫ হাজার বস্তা ডাম্পিং করা হয়েছে। বাকি প্রায় ৩৫ হাজার বস্তা কোথায়? স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে পাউবো ও ঠিকাদারের কাছে কাজের ওয়ার্ক আউট ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া এখন বর্ষা মৌসুম আসন্ন। সামান্য নিম্নচাপের সৃষ্টি হলেই ভঙ্গুর বেড়িবাধ ভেঙে যাওয়া ও ওভার-ফ্লো হয়ে লবণ পানিতে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসন সানা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ডাম্পিং কাজের ফিল্ড তদারককারী আছাদ ও কামরুজ্জামান (টুকু) এর শ্রমিকরা বালুভর্তি জিও বস্তা ডাম্পিং না করে বস্তা কেটে বালু নদীতে ফেলে বস্তা গায়েব করে ফেলেছে। স্থানীয়রা গত ১৯ এপ্রিল প্রায় ৫০ টি জিও বস্তা কাটা অবস্থায় শ্রমিকদেরকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। এঘটনার পর কোম্পানির লোকেরা কাজের যাবতীয় সরঞ্চাম গুটিয়ে কাজ হবে না ঘোষণা দিয়ে কাজের ফিল্ড থেকে চলে যায়।
স্থানীয় যুবক আব্দুল্লাহ পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এস.ও আলমগীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ৭টি প্যাকেজের কাজ শুরুর দিকে বালু ভর্তি বস্তা সেলাই করার পর ডাম্পিংয়ের জন্য লেবার সরদার ও স্থানীয়দের হিসেবে ৪৬৭০ টি বস্তা গণনা করা হয়। অথচ এসও আলমগীর একই বস্তা গণনা করে ৫৩০২টি লিপিবদ্ধ করেন। গণনার এমন তারতম্যের বিষেয়ে জানতে গেলে এসও আলমগীর বলেন, আমরা কৈফিয়ত দিতে আসিনি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মামলা দিয়ে জেলে ভরে দিব। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত এস আলমগীরের সাথে কথা বলা হলে তিনি সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবী করেন। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন এবং বাঁধ রক্ষার কাজ যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।