কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৫০ ভাগ অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। শুষ্ক মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও তীব্র তাপদাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এমন অবস্থায় দৌলতপুরের অধিকাংশ মানুষ, যারা অগভীর নলকূপের পানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের খাবার পানি সহ নিত্য ব্যবহার্য কাজে পানি সংকটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ দিকে নলকূপে পানি সঙ্কটের পাশাপাশি অনেক এলাকায় আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাবও দেখা দিয়েছে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে অনেক পরিবার। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নলকুপে পানি না উঠায় ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষক কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, শুকনো মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আর্সেনিকের মাত্রাটা বেড়ে গেছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এখানকার প্রায় শতভাগ মানুষই ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল।
সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে দৌলতপুর উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজারের বেশী অগভীর নলকুপ (টিউবয়েল) এবং প্রায় সাড়ে ছয় হাজার গভীর নলকূপ রয়েছে।
এসব নলকূপের পানি দিয়েই তারা পান করা সহ প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো ও চাষাবাদে জন্য ক্ষেতখামারে সেচ কাজে ব্যবহার করে থাকেন।
উপজেলার হোগলবাড়িয়া, পিয়ারপুর, মথুরাপুর, দৌলতপুর, প্রাগপুর, আদাবাড়িয়া, প্রাগপুর, রিফাইতপুর, বোয়ালিয়া ইউনিয়নে বেশীর ভাগ গ্রামে কোন টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় সেখান মানূষ ববাড়ি থেকে অনেক দুরের নলকুপ থেকে পানি এনে পান করছেন। এসব গ্রামের মানুষেরা জানান, প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে নলকূপ দিয়ে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম পানি উঠে। কিন্তু এ বছর কোনো কোনো নলকূপে একেবারেই পানি উঠছে না। ফলে, তারা চরম পানি কষ্টে ভুগছেন।
স্থানীয় টিউবওয়েল মিস্ত্রি জান মোহাম্মদ জানান, এখানকার অধিকাংশ টিউবয়েলের গভীরতা সাধারনত ৮০ থেকে ২‘শ ফুট। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির লেয়ার অনেক নিচে চলে গেছে। তাই টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা।
এদিকে উপজেলার মথুরাপুর, প্রাগপুর, আদাবাড়িয়া, হোগলবাড়ীয়া, মরিচা ইউনিয়নের বেশরিভাগ নলকূপে পানি সঙ্কটের পাশপাশি আর্সেনিকের মাত্রা বেশী দেখা দিয়েছে।
এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন নিরুপায় হয়ে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছেন। এতে করে এ অঞ্চলের মানুষের দেহে আর্সেনিক সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার তারাগুনিয়া শালিমপুর গ্রামের আল আমিন জানান, টিউবয়েলের সাথে মোটর লাগিয়ে তিনি পানি উত্তোলন করছেন। পাইপে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। মোটর চালু করার পর দুই-তিন মিনিট পানি ওঠে, এরপর আর পানি উঠছে না।।
বাগোয়ান গ্রামের আকরাম হোসেন জানায়, তাদের গ্রামের বেশ কয়েকটি টিউবয়েলের পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়েছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ বাধ্য হয়েই ওই পানিই পান করছেন।
হোগলবাড়ী ইউপির সোনাইকুন্ডি গ্রামের সুলতান মন্ডল জানান, গরম আবহাওয়া পড়ার সাথে সাথেই আমরা তীব্র পানি সংকটে ভুগছি, রাত ১২ টার পরে টিউবওয়েল চাপাঁচাপি করে অল্প পরিমাণ পানি পেলেও সকাল থেকে আর পানি উঠছে না।
খাস মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার কবির মিন্টু জানান, পানি সঙ্কটের পাশাপাশি তার ইউনিয়নে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি অবগত করেছেন বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের উপণ্ডসহকারী প্রকৌশলী খাদেমুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কিছুটা নিচে চলে যাওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। বর্ষা শুরু হলে নলকূপগুলো ফের স্বচল হয়ে যাবে বলে জানান। আর্সেনিকের বিষয়ে তিনি জানান, পানি পরীক্ষার মাধ্যমে আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলোকে চিহ্নিত করে সেসব নলকূপের পানি পান না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, এ বিষয়টি নিয়ে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।