গাজীপুর, ১০ই জুন ২০২৩: "আমরা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জাংক ফুড বা ফাস্ট ফুডে আসক্ত হয়ে পড়েছি, আমাদের প্রতিষ্ঠানের এই ফল উৎসবের মাধ্যমেই আমরা প্রতি বছর নানান ধরনের দেশীয় ফলের সাথে পরিচিত হই এবং সিজনাল এসকল বাহারি ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারি। ফল আমাদের হার্ট ভালো রাখে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত ফলাহারে শরীর থেকে অ্যাসিড ও বিষ বের হয়ে যায় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে। ফল আমাদের শরীরের চর্বি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফল সিজনাল বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ফল রাখা উচিত।''
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারফানা আফরিন মম, রেজোয়ানা আমিন স্বর্ণা, আনিশা আক্তার ঐশী, অহনা পারভীন মিরা, সিফাতুল্লাহ সিফাত, ইমতিয়াজ আহমেদ শিখন, তানজির আহমেদ নীরব, কিবরিয়া হাসান ও হাসিবুল হোসেইন হিমন ফল উৎসব সম্পর্কে এভাবেই তাদের মত প্রকাশ করে।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহজাবিন নূর নূহা বলে, "দেশীয় ফলে রয়েছে ভিটামিন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রনসহ নানান পুষ্টিগুণ। ফল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীর গঠনে সহায়তা করে। তাই আমাদের ফরমালিন যুক্ত বিদেশি ফল না খেয়ে বেশি বেশি দেশীয় ফল খেতে হবে।"
নানান প্রজাতির দেশি ফলের সাথে পরিচয় ও ফলের বিভিন্ন উপকারিতা শিক্ষার্থীদের জানানোর উদ্দেশ্যে আজ (শনিবার) সকালে গাজীপুর সদর উপজেলাধীন ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটি পরিচালিত ইকবাল সিদ্দিকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কচি-কাঁচা একাডেমি ও নয়নপুর এন এস আদর্শ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে 'ফল উৎসব-১৪৩০' এর আয়োজন করা হয়।
সকালে উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি জনাব আবদুর রহমান, ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটি’র আইন উপদেষ্টা জনাব অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান এবং নির্বাহী সদস্য জনাব অ্যাডভোকেট খন্দকার সোলায়মান ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ।
ফল উৎসবে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কলা, জামরুল, ডেউয়া, ডেফল, করমচা, তেঁতুল, লটকন, আনারস, পেঁপে, আঁখ, তাল, বেল, লেবু, খেজুর, বাঙ্গি, জাম্বুরা, অরবরই, আঙুর, ডাব, ডালিম, কামরাঙা, সফেদা, কমলা, মালটা, আপেল, দাতই, বিলম্ব, আঁতা, চালতা, গাব, চেরি, কাঠ বাদাম, ফেলা ফল, চাম্বল কাঁঠাল, কদবেল, আতা, আমড়া, আমলকি, জলপাই, হরতকি, তরমুজ, বরই ও ড্রাগন ফলসহ ৪৮ প্রজাতির ফল প্রদর্শনীর পাশাপাশি অতিথি এবং শিক্ষার্থীদের ফল কেটে খাওয়ানো হয়।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে যখন জনজীবন অতিষ্ঠ, ঠিক তখনই প্রশান্তি ও সুখের পরশ নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয় মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। এ সময় বাহারি রং-বেরঙের মিষ্টি ও সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়। দেশি নানান প্রজাতির ফলে সুশোভিত হয় চারিদিক। সব ফলের মধ্যেই পানির পরিমাণ বেশি থাকে। সেই কারণে গরমের সময় শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে ফল দারুণভাবে সহায়তা করে। ফলের মধ্যে প্রচুর খাদ্যশক্তি থাকে, যা শরীরের ভেতর থেকে ক্ষতিকর চর্বি বের করে দেয়, তাই ফল সবার জন্য ভীষণ উপকারী। পুষ্টি ও খাদ্যমানের দিক থেকেও সব ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং খনিজ পদার্থ থাকে।
বর্ণিল এই আয়োজনে ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান জনাব আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। ফল উৎসব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘'চমৎকার এই আয়োজন শিক্ষার্থীদেরকে দেশীয় ফল ও ফলের খাদ্যগুণ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। ছেলেমেয়েদেরকে ফল খেতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।"
অনুষ্ঠান সভাপতি জনাব আবদুর রহমান ফল উৎসব সম্পর্কে সদ্য প্রয়াত প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকীর কথা টেনে বলেন," যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী ফল উৎসব আয়োজন শুরু করেছিলেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফল হচ্ছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। এটা ঈশ্বর প্রদত্ত। ঋতু বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশে বিভিন্ন ঋতুতে যেসব বাহারি ফল পাওয়া যায় সেগুলোকে ঐ সময়ের নানান রোগের অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়। তাই ঋতু-অনুযায়ী ঐ ফলগুলো খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।"
ফল উৎসব উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মাকসুদা খাতুন লিপি বলেন, "চিপস, প্যাকেটজাত খাবার, ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুডের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে শিক্ষার্থীদেরকে বিরত রাখা এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন বিভিন্ন দেশি ফলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের এই আয়োজন।"
উল্লেখ্য, ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটি প্রতিবছর মৌসুমি ফল উৎসবের আয়োজন করে আসছে।