আমি ভেড়ামারা সমাজসেবা অফিস থেকে বলছি, আপনি কি ভাতার টাকা পান ? আমরা আপনার জন্য নতুন বই করে দিচ্ছি। আগে তো আপনি পেতেন ১৫’শ টাকা, এখন পাবেন ৩ হাজার টাকা। আপনার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ গেছে, দ্রুত ওই নাম্বার টি বলুন। না হলে আপনার বই টি বাতিল হয়ে যাবে। এভাবেই নানা প্রলোভন দেখিয়ে বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা হাতিয়ে নিতে একটি প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে ভেড়ামারা সমাজসেবা অধিদপ্তরে অভিযোগের স্তুপ পড়ে গেলেও ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন এবং সমাজ সেবা অধিদপ্তর নির্বিকার। তারা বলছেন, আমাদের করার কিছু নেই।
ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ড’র ইউপি সদস্য আবুল কালাম জানিয়েছেন, আমার ওয়ার্ডের ৬/৭ জন বয়স্ক ভাতা গ্রহীতার টাকা প্রতারক চক্র নানা প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে। ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি আবুল হোসেন, মসজিদের ইমাম আসাদুল, আবদুল জলিল, অসহায় দলিমন নেছা কেউ বাদ যায়নি প্রতারক চক্রের ফাঁদ থেকে। এভাবেই প্রতিদিন শত শত অসহায় মানুষের ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্র।
সরজমিন ভেড়ামারা উপজেলা সমাজসেবা অফিস ঘুরে দেখা গেছে, প্রতারকদের ফাঁদের পড়ে টাকা হারিয়ে অসহায় মানুষের আর্ত¥নাদ। তারা অভিযোগের পর অভিযোগ দিচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। নির্বাক আর শূন্য হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাদের। বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রাম থেকে ছুটে আসেন মেনি খাতুন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সমাজসেবা অফিস থেকে আমাকে ফোন করে বলা হয়েছে, আপনি কি ভাতার টাকা পান ? আমরা আপনার জন্য নতুন বই করে দিচ্ছি। আগে তো আপনি পেতেন ১৫’শ টাকা, এখন পাবেন ৩ হাজার টাকা। আপনার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ গেছে, দ্রুত ওই নাম্বার টি বলুন। না হলে আপনার বই টি বাতিল হয়ে যাবে। ভয়েই মোবাইলে আসা গোপন পিন নাম্বারটি জানিয়ে দিই। পরে টাকা তুলতে গিয়ে দেখি আমার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একই ভাবে প্রতারনার শিকার হয়ে বিধবা এবং বয়স্ক ভাতার টাকা খুইয়েছেন, জুনিয়াদহ ইউনিয়নের পরানখালি ৮ নং ওয়ার্ড’র ভানু খাতুন, জোহরা খাতুন, ববিতা আক্তার, ভেড়ামারা পৌরসভার বামনপাড়া গ্রামের দুলাল শেখ’র স্ত্রী জেলি খাতুন, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের হাসানুদ্দিনের পুত্র প্রতিবন্ধী আনিছুর রহমান, ধরমপুর ইউনিয়নের রশিদিপাড়ার খোদাবক্্র’র স্ত্রী শাহারা খাতুন, মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের প্রতিবন্ধী ইউনুস খান, বিধবা রাবেয়া খাতুন, বাহিরচর ইউনিয়নের ১৬ দাগ গ্রামের ইয়াকুব মৌলভী সহ শতাধিক অসহায় মানুষ। সূত্র জানায়, বিলিয়ান্ট্র নামের একটি অ্যাপস’র মোবাইল নাম্বার দিয়ে ওই প্রতারকরা ভাতা গ্রহীতাদের ফোন দিয়ে বিকাশ বা নগদের পিন নাম্বার টি সংগ্রহ করে টাকা তুলে নিচ্ছে। পরে ওই নাম্বারে শত সহ¯্রবার ফোন করেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
মোকারিমপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডেল ইউপি সদস্য ওয়াহিদুল মেম্বর জানিয়েছে, মারাত্বক ব্যাধিতে পরিনত বিকাশ নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারনার মাধ্যমে ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্মস্বার্ত করা। আমার ওয়ার্ড’র অসহায় সুফিয়া বেগম, জোসনা খাতুন সহ আরো ৭/৮ জন’র টাকা প্রতারক চক্র নানা প্রলোভন দেখিয়ে পিন নাম্বার সংগ্রহ করে টাকা তুলে নিচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।
ভেড়ামারা উপজেলা সমাজসেবা অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ বছর ভেড়ামারা উপজেলায় বয়ষ্ক ভাতা পাচ্ছেন ৭ হাজার ৮’শ ১৮ জন, বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ৩ হাজার ২’শ ১৬ জন, প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন ৪ হাজার ৮’শ ৫ জন, হরিজন ভাতা পাচ্ছেন ৩৫ জন, হিজরা ০১ জন, প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ৭৮ জন ও হরিজন ও বেদে জনগোষ্ঠী ভাতা পাচ্ছেন ১৪ জন।
ভেড়ামারা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আবু নাসের জানিয়েছেন, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা একটি প্রতারক চক্র তুলে নিচ্ছে এমন শতাধিক অভিযোগ পেয়েছি। আমরা লিখিত ভাবে উপজেলা প্রশাসন, থানা এবং সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির কাছে পাঠিয়েছি। এ বিষয় নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভাতেও আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এখনো কোন প্রতিকার মেলেনি। সমাজিক সচেতনতা বাড়াতে এলাকায় মাইকিং করার জন্য চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।